উত্তম চক্রবর্তী।

এক দুষ্টু পাত্রীর গল্প 

অপূর্ব বাধ্য হয়ে শেষে বাবা আর মাসী মেসোর সাথে পাত্রী দেখতে যেতে রাজি হল। মাত্র দুই বছর আগে ও সল্ট লেকের এই আই টি কোম্পানিতে চাকরিতে ঢুকেছে। বয়সতো মাত্র আটাশ বছর, এখনই বিয়ে করবার কোন ইচ্ছাই নেই ওর। অপূর্বর যুক্তি হল বিয়ের আগের জীবনটাতে প্রত্যেক ছেলে মেয়ের চুটিয়ে ব্যাচেলর লাইফটা এঞ্জয় করে নেওয়া উচিত। গাছের বেল পাকতে যেমন সময় লাগে তেমনই পাত্র বা পাত্রীর বিয়ের সঠিক সময় আসতেও সময় লাগে। অপূর্ব চায় তিরিশের আগে ও বিয়ে করবে না । আর বাবা আর মাসী কিছুতেই সেটা মানবে না। ওঁদের সেই একই কথা, ‘তোর মা বাঁচা থাকলে এতদিনে তোকে বিয়ে দিয়ে দিতেন।’  

পাত্রীর বাবা অনিল বাবু মেসোর খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু, একই অফিসে উঁচু পোস্টে চাকরি করেন দুজনেই। ভদ্রলোকের এই একটাই মেয়ে। অপূর্বর সম্পর্কে সব শুনেই উনি এই পাত্রের সাথে মেয়ের সম্বন্ধের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। মেসো তার বন্ধুকে কথা দিয়ে দিয়েছেন যে আজ রবিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ওরা পাত্র এবং তার বাবাকে নিয়ে শোভাবাজারে পাত্রী দেখতে আসবেন। সেই মত মাসীরা সকালেই ভবানিপুর থেকে অপূর্ব দের বউবাজারের বাড়িতে চলে এসেছেন। অপূর্ব আজ আর পালিয়ে যাবার কোন সুযোগই পেলো না। বাধ্য হয়ে বিকেলে সবার সাথে মেসোর গাড়িতে উঠে বসল অপূর্ব।

এদিকে আরেক কাণ্ড। পাত্রী মাম্পি কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি নয়। মাম্পি এম এ পাশ করা শিক্ষিতা সুন্দরী স্মার্ট মেয়ে।  অনিল বাবু যতই সম্বন্ধ আনেন মাম্পি কোন না কোন ছুতোয় সেগুলি ভেঙ্গে দেয় আর বলে এই পাত্র ওর জন্য একদম বেমানান। এমন দুষ্টু দুবার তো পাত্রর সাথে ছাঁতে গিয়ে আলাদা করে কথা বলে তাদের দিয়েই সম্বন্ধ ভেঙ্গে দিয়েছে। ওদের বলেছে ওর নাকি আরেকজনের সাথে প্রেম ভালোবাসা আছে। সুতরাং ও চায়না তিন তিন খানা জীবন নষ্ট হোক। এই কথা শুনেই ওরা পিছিয়ে গেছিল। একবার ছাঁতে গিয়ে এক পাত্রকে বলে দেয় যে ওর নাকি একটা কঠিন মেয়েলি অসুখ আছে। ব্যাস সেই শুনে ছেলে নিজে থেকেই বেঁকে বসেছিল

মাম্পি সবচেয়ে বেশি শয়তানি করেছিল বেহালার এক ডাক্তারের সাথে। একই রকম ভবে সেই পাত্রকেও মাম্পি কথা বলবার নাম করে ছাঁতে নিয়ে যায় আর ওকে জানায় ওর একটা বয় ফ্রেন্ড আছে। এমনকি মাম্পি সেই ডাক্তারকে একটা যুবকের সাথে ওর খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে তোলা একটা ছবিও দেখায় আর বলে এই হল ওর বয় ফ্রেন্ড। ওকে ছাড়া মাম্পি আর কাউকেই বিয়ে করে সুখী হতে পারবে না। সেই ডাক্তার নিচে নেমে বাবা মাকে নিয়ে ফিরে গেছিল আর পরে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ওদের মেয়ে পছন্দ হয়নি। আসলে ঐ ছবিটা মাম্পি ওর সেল ফোনে এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে দিয়ে তার বরের সাথে তুলে রেখেছিল যাতে বেশি বিপদে পড়লে ঐ ছবিটা দেখিয়েই সম্বন্ধ ভেঙ্গে দিতে পারে।

আরেক বার একজন প্রফেসর দীলিপ বসুকে মাম্পি ধোঁকা দেয় আরেক মিথ্যা কাণ্ড ঘটিয়ে। পাত্রর বাড়ির লোকেরা এলে মাম্পি এমন একটা হাসি খুশী ভাব দেখায় যে সবাই ধরে নেয় যে মাম্পির পাত্র পছন্দ হয়েছে। মাম্পির বাবা পাত্রর অনুরোধে শ্যাম বাজারের এক রেস্তোরাঁয় মেয়েকে ওর সাথে দেখা করে কথা বলবার অনুমতি দেন। মাম্পিও রাজি হয়ে যাওয়াতে অনিল বাবু খুব খুশী হয়েছিলেন যে এবার বোধ হয়ে মেয়ের সাথে এই পত্ররই বিয়ে লাগবে। কিন্তু তার বহুরুপী মেয়ে যে কী মতলব করে বসে আছে সেটা তো অনিল বাবু কল্পনাও করতে পারেন নি তখনো।

নির্দিষ্ট দিনে বিকেল পাঁচটার সময় দীলিপ গিয়ে হাজির হয় সেই রেস্টুরেন্টে। রাস্তার ধারের একটা টেবিলে বসে কাঁচের মধ্য দিয়ে তাকিয়ে থাকে, মাম্পির আসবার পথের দিকে তাকিয়ে। দীলিপের প্রায় সব বন্ধুর বিয়ে হয়ে গেছে। এই মাম্পি মেয়েটাকে দীলিপের বেশ পছন্দ হয়ে গেছিল। মনে মনে ভেবে রাখেছিল আজ ওর সাথে কথা বলেই বাড়িতে গিয়ে ওর মেয়ে পছন্দ হয়েছে জানিয়ে দেবে। কিন্তু মিনিট দশেক বাদেই দীলিপ কাঁচের ভিতর থেকে অবাক হয়ে দেখে রাস্তার উল্টো দিক থেকে মাম্পি রাস্তা পার হয়ে এই রেস্তোরাঁর দিকে এগিয়ে আসছে সিগারেটে টান দিতে দিতে। দীলিপ অবাক হয়ে যায় ওর হবু বৌ সিগারেট খায় দেখে। চুপ করে দেখতে থাকে মাম্পিকে। মাম্পি যেন ওকে না দেখেই সিগারেটটা রাস্তার পাশে ছুঁড়ে দিয়ে এক মুখ ধোয়া ছেড়ে এসে ঢোকে কাঁচের দরজা ঠেলে রেস্তোরাঁর ভিতর। তাকিয়ে দেখে ডান দিকে একটা টেবিলে বসে দীলিপ অবাক হয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।  

দীলিপ মাম্পি এসে সামনের সোফায় বসতেই একটা তীব্র সিগারেটের গন্ধ পেল। দীলিপ নিজে কোন নেশা করে না। আর সেই কারণেই সিগারেটের বা মদের গন্ধ ওর একদমই সহ্য হয় না। মাম্পি হেসে বলে, ‘সরি, আমার বোধ হয় একটু লেট হয়ে গেল তাই না ? আপনি কখন এসেছেন ?’ দীলিপ নীল জিন্স আর আকাশি রঙের টপ পরে আসা মাম্পির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জবাব দিল, ‘বেশিক্ষন না। এই প্রায় মিনিট পনের হবে।’

দীলিপ ততক্ষণে ঠিকই করে নিয়েছিল আর যাই হোক এই সিগারেট খাওয়া মেয়েকে ও কিছুতেই ওর জীবন সঙ্গিনী করতে পারবে না। দুজনে একটু গল্প করে কফি শেষ করে একটু বাদেই উঠে পরেছিল। মাম্পি কিন্তু খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওর হবু বরের সাথে কথা বলছিল, যেন কিছুই হয় নি। কিন্তু দীলিপ বাড়ি ফিরেই এই সম্বন্ধ নাকচ করে দেয় এবং অন্য এক পাত্রীকে বিয়ে করে ফেলে।

এদিকে এই দীলিপ আর অপূর্ব হল ছোটবেলার বন্ধু। ওরা আগে অপূর্বদের পাশের বাড়িতে বউ বাজারেই থাকত আর দুজন একই স্কুল থেকে হাইস্কুল পাশ করেছিল। পরে দীলিপ এম এস শি করে ডক্টরেট করে প্রফেসারিতে জয়েন করে আর অপূর্ব ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে আই টি সেক্টরে ঢুকে যায়। দীলিপরা সবাই ওর বিয়ের পর কাছেই একটা ফ্ল্যাট বাড়িতে উঠে গেলেও দুই বন্ধুর মধ্যে কিন্তু দেখা সাক্ষাৎ মেলামেশা এখনো একই আছে।  

আজই সকালে বাজার করতে গিয়ে দুই বন্ধুর দেখা হয়েছে। কথায় কথায় অপূর্ব জানায় ও আজ বাবা মাসীদের সাথে ওর বিয়ের পাত্রী দেখতে শোভাবাজার যাচ্ছে। শোভাবাজার শুনতেই দীলিপ পাত্রীর ব্যাপারে সব জানতে চায় আর সেই একই মেয়েকে ওর বন্ধু অপূর্ব দেখতে যাচ্ছে শুনে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। ওর অবস্থা দেখে অপূর্ব জিজ্ঞাসা করল,  ‘কিরে, তোর আবার কী হল ? দাঁড়ালি কেন ?’

দীলিপ অপূর্বকে অবাক করে দিয়ে বলে, ‘আরে সর্বনাশ, তুই ঐ মেয়েটাকে দেখতে যাচ্ছিস অপু ? আরে সেদিন আমিও তো ঐ পাত্রীকেই দেখতে গেছিলাম রে। ও মাই গড। মেয়েটা এক অদ্ভুত টাইপের মাইরি। বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝা যাবে না। কিন্তু মেয়েটা লুকিয়ে সিগারেট খায় জানিস ? আমি নিজে ওকে সিগারেট খেতে দেখেছি সেদিন যখন আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল শ্যাম বাজারের রেস্টুরেন্টে। তুই ওকে দেখতে যাচ্ছিস অপু ?’

অপূর্ব আকাশ থেকে পড়ল।  মাম্পি নামের মেয়েটা সিগারেট খায় সেটা কি মাসীরা জানে না ? কী করে জেনে শুনে এখন ও এই পাত্রীকে বিয়ে করবে ? অপূর্ব চিন্তায় পড়ে যায়। হেসে বলে, ‘আসলে কী হয়েছে বলতো, মেসোমশাইয়ের বন্ধুর মেয়ে। আজ আমরা যাবো মেসো কথা দিয়ে দিয়েছে। আমার তো এমনিতেই এখন বিয়ে করবার কোন ইচ্ছাই নেই। দেখনা আমিও কিছু না কিছু বাহানা করে এই সম্বন্ধটা নাকচ করে দেব। সিগারেট খাওয়া মেয়েকে কে বিয়ে করবে, মাথা খারাপ ?’

সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার একটু আগেই ওরা পৌঁছে গেল শোভা বাজার। রাস্তায় মেসোমশাই অনেক ভালো ভালো কথা বললেন মাম্পির ব্যাপারে। উনি নিজে যদিও মেয়েটাকে দেখেন নি, কিন্তু ওর বাবার কাছে শুনেছেন মেয়েটি খুব সুন্দরী, বুদ্ধিমতি এবং খুব সভ্য ঘরোয়া মেয়ে। মেসোর কথা শুনে অপূর্ব মনে মনে হাসতে থাকে যে মেসো বোধ হয় জানেও না যে মেয়ে একজন সিগারেট খাওয়া নেশাখোর মেয়ে। ঠিক আছে, আমিও এই মেয়েকে পছন্দ হয়নি বলে কাটিয়ে দেব।

মাম্পির এক বয়স্কা পিসি বসবার ঘরে মাম্পিকে ধরে ধরে নিয়ে এলেন। মাম্পির পরনে একটা ডীপ সবুজ রঙের সিল্কের শাড়ি আর ম্যাচ করা ব্লাউজ। মাথার চুল উঁচু করে স্টাইল করে বাঁধা। মাম্পির বাবা মা একবার অপূর্বর মুখের দিকে তাকালেন। আর অপূর্ব মাম্পিকে দেখে একেবারে বোল্ড আউট হয়ে যায়। কী দারুণ সুন্দর দেখতে মেয়েটা। কী বড় বড় টানা চোখ। গায়ের রং যেন দুধে আলতা, লম্বা আর মাথা ভর্তি ঘন কালো চুলে মাম্পিকে একটা রাজকন্যার মত লাগছে তখন। অপূর্ব অবাক হয়ে ভাবছিল এই এতো সুন্দর মেয়েটা সিগারেট খায় ? ওর কিছুতেই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না ব্যাপারটা।

মাম্পির কিন্তু ছেলেটাকে এবার সত্যি সিত্য ভালো লাগল। কিন্তু অপূর্বর সাথে চোখা চোখি হতেই মাম্পি মুচকি হেসে চোখ নামিয়ে নেয়।  কাজের লোক এসে চা মিষ্টি দিয়ে যাবার পর অনিল বাবু অপুর্বর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তা বাবা, তোমরা দু’জন যদি আলাদা করে কথা বলতে চাও তবে যাও আমাদের ছাঁতে গিয়ে একটু ঘুরে এসো। যা মাম্পি, অপূর্বকে ওপরে নিয়ে যা মা। আমরাও একটু কথা বলি ততক্ষন। তোরাও তোদের কোন কথা থাকলে সেরে আয় মা। যাও বাবা, তুমি যাও।’

শান্ত শিষ্ট একটি ভদ্র মেয়ের মত ঘাড় নেড়ে মাম্পি উঠে দাঁড়িয়ে তাকাল অপূর্বর দিকে। অপূর্ব মাসীর দিকে একবার তাকিয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়।  মাম্পির পিছন পিছন ছাঁতে এসে এক পাশে দাঁড়ায়। অনেক ফুল গাছ দিয়ে সুন্দর করে সাজানো ছাঁতের এক ধারে দাঁড়িয়ে প্রথম কথা বলে মাম্পি। ও ঠিক করেই এসেছে এবার এই ছেলেটা কতোটা স্মার্ট তার একটা পরীক্ষা না নিয়ে ও এই বিয়েতে মত দেবেনা। মাম্পি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনার কোন গার্ল ফ্রেন্ড নেই ?’  

অপূর্ব সতর্ক হয়ে যায়। বুঝতে পারে মেয়েটা এবার ওকে বাজিয়ে দেখতে চায়। হেসে উত্তর দেয়, ‘হ্যাঁ, কেন থাকবে না ? অনেক আছে। আর আপনার কোন বয় ফ্রেন্ড নেই মাম্পি দেবী ?’

মাম্পি বুঝতে পারে অপূর্ব ওর চালাকি ধরে ফেলেছে। মাথা নিচু করে বলে, ‘আমার একটা বয় ফ্রেন্ড আছে জানেন। কিন্তু বাবা তাকে কিছুতেই মানবে না। আমি জানি আমাকে একদম জোর করেই এই আপনার সাথে বিয়েতে বসতে বলবে।’

অপূর্ব জাবাব দেয়, ‘আরে বিয়ের আগে এরকম অনেকেরই বয় ফ্রেন্ড বা গার্ল ফ্রেন্ড থাকে। ওসব ছাড়ুন তো। বিয়ের পর দেখবেন তখন এই আমি একজনই থাকব আপনার নট আউট বয় ফ্রেন্ড।’ 

মাম্পি চিন্তা করে, আরে এ তো নাছোড় বান্দা লোক। ব্লাউজের ফাঁক থেকে ওর বন্ধুর বরের সাথে তোলা সেই ফটোর প্রিন্ট বের করে দেখিয়ে বলে, ‘এই দেখুন ওর ছবি। কিন্তু আমার বয় ফ্রেন্ড যদি আমাকে না পেয়ে কিছু একটা কেলেঙ্কারি করে বসে, আই মিন আত্মহত্যা করে যদি ?’

অপূর্ব হাসতে থাকে। মাম্পি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকাতেই অপূর্ব বলে,‘আপনি আমাকে ওর ফোন নম্বর দিন। আমি নিজে ওর সাথে কথা বলে বোঝাব। আপনি একদম টেনশন নেবেন না। এখন তো আপনি আমার গার্ল ফ্রেন্ড তাই না।’ বলতে বলতেই অপূর্ব পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে খুলে ধরে মাম্পির সামনে আর বলে, ‘নিন, আপনার তো সিগারেট চলে। নিন ধরুন একটা। নিচে যাবার আগে দুটো সুখ টান দিয়ে নেই। ধরুন ধরুন’ বলে খোলা সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দেয় অপূর্ব। মাম্পি স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। ফিস ফিস করে বলে, ‘আমি তো সিগারেট খাই না। কে বলল আপনাকে যে আমি সিগারেট খাই ?’

অপূর্ব সোজাসুজি বলে ফেলে, ‘কেন সেদিন প্রফেসর দীলিপের সাথে দেখা করতে গেছিলেন না সিগারেট খেয়ে মুখে সিগারেটের গন্ধ নিয়ে। দীলিপ আমার বন্ধু তো। আজ আমি আপনাকে দেখতে আসছি শুনেই বলল ও নিজে সিগারেট খায় না বলেই আপনার মত সুন্দরীর সাথেও বিয়েতে অমত জানিয়েছিল। নিন নিন ধরুন, আমি সব জানি, আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খান। কী আছে ? আজকাল অনেক মেয়েরাই তো খায়। আপনি বিয়ের পরেও খেতে পারবেন। আর আমার এই ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই।’

মাম্পি অপূর্বর কথায় একেবারে বোল্ড আউট হয়ে যায়। আবার ওর মনে ভয়ও ঢুকে যায়, অপূর্বকে যদি ও আজ নাকচ করে দেয় তাহলে যদি অপূর্ব ওর বাবাকে জানিয়ে দেয় যে ও সিগারেট খায়। আসলে শুধু সেদিন দীলিপের সাথে সম্বন্ধ ভেঙ্গে দেবার জন্যই মাম্পি ঐ নাটকটা করেছিল, আসলে ও তো সিগারেট ছোঁয়ও না। রাস্তার ওপার থেকেই মাম্পি দেখেছিল রেস্টুরেন্টের ভিতর কাঁচের ওপারে দীলিপ বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। মাম্পি ওপারের ফুটপাথের পাশের দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনে সেটা ধরিয়ে দীলিপের দিকে না তাকিয়ে ইচ্ছা করেই ওভাবে রাস্তা পার হয়। উদ্দেশ্য ছিল দীলিপের সামনে ওই সিগারেট খাওয়ার নাটক করে এই বিয়েটাও ভেঙ্গে দেওয়া। মাম্পি চাকরি করবে, জীবনটাকে আরও এঞ্জয় করবে, এখন ও কিছুতেই বিয়ে করবে না।  

মাম্পি চুপ করে মাথা নিচু দাঁড়িয়ে আছে দেখে অপূর্ব এগিয়ে এসে মাম্পির হাত ধরে খুব শান্ত গলায় বলল, ‘তুমি এতো সুন্দর এতো ভালো একটা শিক্ষিতা মেয়ে। কেন তুমি লোকের কাছে মিথ্যা কথা বল মাম্পি ? আমি জানি তুমি বিয়ে করতে চাওনা বলেই এসব করে সব সম্বন্ধ ভেঙ্গে দাও। দীলিপের কথা শুনেও আমার বিশ্বাস হয় নি। আর আজ এখন তোমাকে দেখেই আমি একশ ভাগ সিওর হয়ে গেছি তুমি এসব কর শয়তানি করে মাম্পি। কিন্তু আমি যে তোমার প্রেমে পড়ে গেছি মাম্পি। তুমি যাই হও না কেন, আমি এই তোমাকেই বিয়ে করব। আমিও এতোদিন বিয়ে করবনা করবনা বলে কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু আজ তোমাকে দেখেই মনে হয়েছে না, আমাকে এবার টোপর পরতেই হবে। আর সেটা শুধু তোমার জন্যই মাম্পি। তুমি বিয়ে করবে তো আমাকে মাম্পি ? আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। সাড়া জীবন তোমাকেই আমি পাশে পেতে চাই।’

মাম্পি এবার ছলছল চোখে তাকায় আর বলে, ‘আমি এতো খারাপ মেয়ে জেনেও তুমি আমাকে ভালোবাসবে অপূর্ব ? তুমি কেন এতো ভালো গো ? আমি আর পারলাম না। আমি তোমার কাছে হেরে গেছি অপূর্ব। বিশ্বাস কর আমিও তোমাকে দেখেই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।’ বলতে বলতে দুই হাতে অপূর্বকে জড়িয়ে ধরে মাম্পি। ভাবে অনেক তো খেল হল, এবার এই অপূর্বর সাথেই ঘর বেঁধে সংসার করব আমি। ঠিক তখনই পাশের বাড়ি থেকে সন্ধ্যার শঙ্খধ্বনি ভেসে এলো। স্বয়ং ভগবান যেন ওদের আশীর্বাদ করলেন ঐ খোলা ছাঁতের মণ্ডপে।   

                   ——–শেষ——-