– ফেসবুকের প্রেম –    উত্তম চক্রবর্তী।

আজকাল অনেকেই ফেসবুকে তাদের ব্যাক্তিগত সমস্ত তথ্য, ফটো বা কোন কোন বিষয়ে তদের ইন্টারেস্ট ইত্যাদি শেয়ার করতে চায় না। অনেকেই আবার তাদের নিজেদের ফটো না দিয়ে অন্য কোন সিনেমার নায়ক নায়িকা বা কোন বিখ্যাত ব্যাক্তির ফটো দিয়ে নিজের চেহারা লুকিয়ে রাখে। কিন্তু তবুও তাদের বন্ধু সংখ্যা কিছু কম নয় বা অনেকেই তাদের সাথে বন্ধুত্ব পাতাবার চেষ্টাও করে। এই ফেসবুকিয় বন্ধুত্বের জগতের এক আশ্চর্য আকর্ষণ বা ইতিহাস আছে, যেখানে নিয়তই নতুন নতুন ঘটনা ঘটে চলেছে।

কোন এক সময় এই ফেসবুকের মাধ্যমেই আলাপ ওদের দু’জনের। দুজনের মধ্যে একজন মানে হিরু, হিরন্ময় সান্যাল, তার একটা সুন্দর ফটো দিয়ে প্রোফাইল খুলেছে। সফট ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, এক্সেঞ্চারে চাকরি করছে আজ প্রায় পাঁচ বছর, থাকে পুণেতে। আরেক জন হল মন্দিরা, ডাকনাম ইরা, থাকে বিরাটিতে, চাকরি করছে টি সি এসের সল্ট লেকের অফিসে। এই দুজন তাদের বন্ধুদের প্রোফাইলে লাইক ও কমেন্ট করে ঝগড়ার মধ্য দিয়ে একে অপরের সাথে পরিচিত হয়। হিরু কিন্তু মন্দিরা মেয়েটির প্রোফাইলে কোন ফটো না থাকলেও ওর কমেন্ট গুলি বা ওর নিজের ওয়ালে বিভিন্ন শেয়ার করা ম্যাসেজগুলি দেখে আকৃষ্ট হয়ে ওর প্রেমে পড়ে যায়। এদিকে ইরা প্রথমত হিরুর ফটো ও তারপর ওর স্ট্যাটাস দেখে এবং ওর ঝগড়ার যুক্তি ও লিখন ভঙ্গি দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়ে হিরুর প্রেমে ভাসতে থাকে। তারপর শুরু হয় ওদের ম্যাসেজ চ্যাটিং, মন দেয়া নেয়ার ও মান অভিমানের খেলা। দুই নাদেখা প্রেমিক প্রেমিকা একজন আরেকজনকে দেখবার জন্য অপেক্ষায় থাকে কখন ওরা দুজন দুজনের কাছাকাছি আসবে। তবে ওদের মধ্যে কখনো ভিডিও চ্যাটিং হয়নি আজ পর্যন্ত।

দুর্গা পূজোর ছুটিতে দশ দিনের জন্য হিরু এবার এলো কলকাতায় ওদের সল্ট লেকের বাড়িতে। বাবা রিটায়ার্ড, পূর্ত দফতরের সরকারি অফিসার, আর মা ছিলেন স্কুল টিচার। একটাই দিদি, বিয়ে হয়েছে প্রায় তিন বছর আগে, মুম্বাইয়ে থাকে। হিরু বাড়িতে এসে ওর ক্লাব ও পূজা নিয়ে মেতে উঠল। এরই মধ্যে একদিন ওর ফেসবুক বান্ধবী মন্দিরাকে দেখা করবার অনুরোধ জানাল হিরু। ঠিক হল সেক্টর ওয়ানে সি ডি ব্লকের ‘আউধ ১৫৯০’ এ অষ্টমীর দিন ওরা মিট করবে এবং একসাথে লাঞ্চ করবে।      

মন্দিরা ওর বাবা মায়ের বড় মেয়ে। নিচে একটা ছোট ভাই আছে, ক্লাস ইলেভেন পড়ছে। মন্দিরার বয়স আঠাশ। দেখতে অসাধারণ সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী মেয়ে। মন্দিরা বি টেক পাশ করেই অন্য একটা ছোট সফট ওয়্যার কোমাপ্নিতে প্রথমে অল্প মায়নার চাকরিতে ঢুকে পড়ে আর ঠিক দুই বছর বাদে সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে টি সি এসে জয়েন করেছে গত বছর। বাড়ি থেকে স্কুটি নিয়েই অফিস যাতায়ত করে। তবে ছেলেদের ও খুব একটা পাত্তা না দিলেও মন্দিরা কিন্তু এই হিরন্ময় সান্যালের প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে।

মন্দিরার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ওর স্কুলের বান্ধবী পাশের পাড়ার ডলি সাহা চাকরি করে দমদমের একটা প্রাইমারী স্কুলে। ডলির চেহারা যদিও বেশ সুন্দর, শুধু ওর গায়ের রংটা একটু চাপা। মন্দিরাকে ডলি ওর মনের সমস্ত কথা শেয়ার করে আর মন্দিরাও ওর সব গোপন কথা বলে ডলিকে। ডলি জানে যে এবার দুর্গা পূজার সময় ওর প্রিয় বান্ধবী তার বয়ফ্রেন্ড মানে ওর ফেসবুক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাবে সল্ট লেকে অষ্টমীর দিন দুপুরে। সকালে এসে দুই বন্ধু পাড়ার পূজো প্যান্ডেলে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দেবার সময় মন্দিরা ডলিকে জানাল, ‘ডলি শোননা, আমার মাথায় একটা দারুণ প্ল্যান এসেছে। শোন এদিকে আয় বলছি।’

ডলিকে হাত ধরে টেনে একটু ফাঁকায় নিয়ে গিয়ে দাঁড়াতেই ডলি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘কী আইডিয়ারে ইরা ? কি আজ তুই যাবিনা, ওর ধৈর্যর পরীক্ষা নিবি নাকি ?’

ইরা, মানে মন্দিরা চোখের কোণে ধূর্তের হাসি এনে বলে, ‘শোন, আজ তুই ওখানে যাবি আমি মানে মন্দিরা সেজে। ও তো আর আমার ফটো দেখেনি বা আমার সাথে কোন ভিডিও চ্যাটিং করেনি। সুতরাং হিরন্ময় ভাববে তুইই বোধ হয় আমি। আর তুই ওর সাথে কথা বলে ওকে একটু ভাল করে বুঝবার চেষ্টা করবি।’

ডলি শীতের দিনে মেঘের ডাক শুনে আমরা যেমন অবাক হই সেরকম অবাক হয়ে যায় বান্ধবীর কথা শুনে। মুচকি হেসে বলে ওঠে, ‘ধ্যাত, ওরকম হয় নাকি ? ধরা পড়ে গেলে ? না না, আমি ওসব করতে পারবনা ভাই। তুই নিজেই যা, গিয়ে তোর এতো দিনের চোখের খিদে মিটিয়ে আয়।’

কিন্তু মন্দিরা বান্ধবীর কোন আপত্তিতেই কর্ণপাত করল না। বন্ধুকে চেপে ধরে বলল, ‘আরে তুই আজকালকার মেয়ে হয়ে এতো ঘাবড়াচ্ছিস কেন বলতো ? আমি কি তোকে গিয়ে ওর সাথে শুতে বলেছি নাকি ?  আমি বলছি তুই আজ প্রথম দিন যা, গিয়ে দ্যাখ ও কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে নাকি এসব শুধুই ফেসবুকের প্রেম, কোন গভীরতা নেই ওর মধ্যে। আর কথা বার্তা বলে তুই ভালই বুঝবি ও ছেলে হিসেবে কেমন। মানে আমি কি ওকে লাইফ পার্টনার করতে পারব নাকি একেবারে ভেজাল মাল একটা।’

অবশেষে বাধ্য হয়ে বন্ধুর আবদার রাখতে রাজি হয়ে যায় ডলি। বাড়িতে না গিয়ে মন্দিরাদের বাড়িতে গিয়ে ওর একটা ভাল দামী সিল্কের গোলাপি শাড়ি আর ম্যাচ করা ব্লাউজ পরে বেলা একটা নাগাদ বাসে চেপে সল্ট লেকের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিল মন্দিরা রুপী ডলি সাহা। ফেসবুকের হিরুর প্রোফাইল ফটো ডাউন লোড করে সেটা ডলিকে ওর সেলে পাঠিয়ে দিয়েছিল মন্দিরা, যাতে হিরুকে ডলি চিনতে পাড়ে। ওদিকে হিরু জিজ্ঞাসা করায় ওকে বলা ছিল যে মন্দিরাই ওকে খুঁজে নেবে, ওর ফটো ও দেখেছে ফেসবুকে। বন্ধুকে শিখিয়ে দিল কী কী প্রশ্ন করে ছেলেটার মনের ভাবগতিক বুঝতে হবে ডলিকে। 

মন্দিরা যতই ওর ফেসবুক প্রোফাইলে নিজের প্রোফাইল পিকচার না দিক হিরু কিন্তু ওর বান্ধবীদের ফেস বুক পেজে তন্ন তন্ন করে খুঁজে একটা কমন মুখ সব জায়গায় দেখতে পেয়ে মনে মনে আন্দাজ করতে পেড়েছিল যে মন্দিরা মেয়েটি কেমন দেখতে। হিরু এলো ওর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মঞ্জিল সেনকে সাথে নিয়ে। মঞ্জিল বড়লোকের একমাত্র ছেলে। একই পাড়ায় থাকে। হ্যান্ড সাম মঞ্জিলও হিরুর মতই ব্যাচেলর।   

‘আউধ ১৫৯০’ ভীষণ সাজানো গোছানো একটা নামকরা রেস্টুরেন্ট। সল্টলেকের এই অভিজাত রেস্তোরাঁয় পূজোর সময় সিট পাওয়াই মুশকিল। হিরু আগেই ফোন করে চারটে সিট বুক করে রেখেছিল। হিরু ভেবেছিল যদি মন্দিরাও ওর কোন বান্ধবীকে নিয়ে আসে তাহলে ওরা সবাই একসাথে বসে খেতে খেতেই আলাপ পরিচয় করে সময় কাটাবে ও ঘনিষ্ঠতা বাড়াবে। মঞ্জিলের সাথে ওর গাড়িতে বেলা ঠিক দেড়টার সময় পৌঁছে গেল হিরু। দুই বন্ধুই আজ সুন্দর পাজামা পাঞ্জাবীতে পুরোপুরি বাঙালি সাজে সেজে গুজে এসেছে।

রেস্তোরাঁর সুসজ্জিত দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে মন্দিরা রুপী ডলি। ওর হাতে ধরা আছে সেল ফোন, সেখানে ইরার ম্যাসেজে পাঠানো হিরুর ছবিটা খোলা আছে। ডলির তখন কেন জানি বুকের ভিতরটা ঢিব ঢিব করছে। এরকম ভাবে আজ ইরা ওকে ফাঁসাবে সেটা আজ সকালেও ভাবতে পারেনি। ইরার বাড়ি থেকেই মাকে ফোনে জানিয়ে দিয়ে এসছে যে ও আর ইরা ঠাকুর দেখতে বের হচ্ছে আজ। রাতে চূড়ান্ত ভিড় হবে তাই ওরা দিনের বেলাতেই কিছু বড় বড় প্যান্ডেল ঘুরে বিকেলে বাড়ি ফিরবে।

কোণের টেবিলে বসা হিরুর নজর ছিল প্রধান দরজার দিকে। পাশে বসে মঞ্জিল তখন সুপ খাচ্ছিল। হঠাৎ হিরুর দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে প্রধান দরজার দিকে তাকিয়েই ডলির সাথে চোখাচখি হয়ে গেল ওর। ডলি দেখল মন্দিরার ফেসবুক ফ্রেন্ড হিরন্ময় পাশে একটা ছেলেকে নিয়ে কোণের টেবিলে বসে দরজার দিকেই তাকিয়ে আছে। হিরুকে একবার দেখে ও ফোনের সাথে মিলিয়ে নিয়ে ডলি ওদের দিকে এগিয়ে গেল। মঞ্জিল ভাবল এই বোধ হয় হিরুর প্রেমিকা মন্দিরা। কনুই দিয়ে এক গুঁতো মেরে বন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করবার চেষ্টা করল মঞ্জিল। হিরু মুখ ঘুরিয়ে বলল, ‘কী ব্যাপার ? গুঁতচ্ছিস কেন ?’ 

মঞ্জিল ফিস ফিস করে বলে, ‘ঐ যে গুরু, তোমার “উনি” এসে গেছেন দেখ।’

হিরু ডলিকে দেখে অবাক হয়ে তাকায় ওর দিকে। ডলি হেসে এগিয়ে এসে হিরুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে স্মারটলি বলে, ‘আমার বেশি দেরি হয়নি তো হিরন্ময় ? কতক্ষন হল এসেছ তোমরা ?’

ডলিকে মন্দিরার এই রঙিন সিল্কের শাড়িতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আজ। মনে মনে ভয়ে ভয়ে থাকলেও ডলি ওপেনিং বলটা দারুণ ভাবে ছুঁড়ে তাকিয়ে রইল হিরুর দিকে। হিরু অবাক নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আর ইউ মন্দিরা ?’ মঞ্জিল নিজেও বন্ধুর সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়েছিল। হাত দিয়ে সামনের চেয়ারের দিকে ইশারা করে বলল, ‘আপনি বসুন মিস মন্দিরা।’ সাথে সাথে রেস্তোরাঁর একজন বেয়ারা এগিয়ে এসে মন্দিরার চেয়ারটা টেনে ওকে বসবার জন্য ইশারা করে বলল, ‘বসুন ম্যাডাম’।

মন্দিরা রূপী ডলি চেয়ারে বসে মুচকি হেসে বলল, ‘কেন তোমার বুঝি সন্দেহ হচ্ছে হিরণ্ময় ?’ হিরু মনে মনে ভাবছিল তাহলে কি আমি ভুল মেয়েকে মন্দিরা ভেবেছিলাম। মন্দিরা ভেবে যাকে আশা করছিল আজ সেতো আরও অনেক বেশি সুন্দর দেখতে। হিরু মুখে হাসি এনে বলল, ‘না না, সন্দেহ হবে কেন ? আসলে তোমাকে আজ প্রথম দেখলাম তো তাই। কেমন আছ মন্দিরা ?’

ডলিকে এখন অভিনয় করতে হবে। আড় চোখে তাকিয়ে দেখে হিরুর সাথে যেই ছেলেটা এসেছে সে ওকে হাঁ করে গিলছে। ডলির একটু অস্বস্থি লাগছিল। হিরু যে সাথে আবার কাঊকে নিয়ে আসবে সেটা তো মন্দিরাও বলেনি আর ডলি নিজেও ভাবতে পারেনি। কিন্তু ছেলেটা ভীষণ হ্যান্ড সাম, চোখ দুটো খুব বড় বড় আর মুখের মধ্যে একটা নিরীহ ভাব আছে। হিরু ওর সাথে আলাপ করিয়ে দিয়ে বলল, ‘এই হল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, তোমাকে যার কথা লিখেছিলাম। নামটা মনে আছে তো ?’

এবার ডলি পড়ে গেল মুশকিলে। মুখে হাসি বজায় রেখে একটু মাথা চুলকে নিয়ে বলল, ‘আরে, কী যেন নামটা বলেছিলে…?’ মনে মনে ভাবল ঈশ, ইরা কেন যে এসব আগে থেকে আমাকে বলেনি কে জানে।

হিরুর মনে একটা খটকা লাগল ঠিকই, কিন্তু মুচকি হেসে শুধু বলল, ‘ও হল সেই মঞ্জিল, মঞ্জিল সেন। আমার পাড়াতেই থাকে। ও কিন্তু আমাদের সব কথাই জানে। আর তাই ওকে নিয়ে এলাম…এই মঞ্জিল, তুই খাবারের অর্ডার দিয়ে দে। ঐ ছেলেটাকে ডাক …আর তুমি কি আগে একটু সুপ খাবে নাকি মন্দিরা ?’

মঞ্জিল ডলি না করায় আর সুপের অর্ডার না দিয়ে তিনজনের জন্য এখানকার বিখ্যাত বিরিয়ানির অর্ডার করে দিল। তবে তার আগে দুই প্লেট চিকেন টিক্কা নিয়ে আসতে বলল স্টারটার হিসাবে।

মঞ্জিল আর ডলি খেতে খেতে কথা বলছিল যখন হিরু তখন বাঁ হাতে টেবিলের নিচে সেল ফোনে মন্দিরার ফেশ বুকে ঘুরতে থাকে। কথায় কথায় ওর কেমন যেন সন্দেহ হতে থাকে যে এ কিছুতেই মন্দিরা হতে পারেনা। হঠাৎ মন্দিরার ফ্রেন্ড লিস্টে ওর সামনে বসে থাকা মেয়েটার প্রোফাইল দেখে ফেলে হিরু। দ্যাখে এই মেয়েটি আসলে হল ডলি, ডলি সাহা। টিচারি করে বিরাটির কোন এক স্কুলে। তার মানে মন্দিরা ওকে পাঠিয়েছে আগে হিরুর সম্পর্কে একটা ধারণা নেবার কাজে ওকে লাগিয়ে দিয়ে। হিরু মনে মনে হাসল।

মঞ্জিলের সাথে যতটা ফ্রি ভাবে কথা বলছিল ডলি, ঠিক ততোটাই জড়তা নিয়ে কথা বলছিল হিরুর সাথে। ও বুঝতে পেরে যায় যে হিরু ওকে সন্দেহ করতে শুরু করে দিয়েছে। ডলির বুক দুরুদুরু করতে থাকে, হিরু আবার ওকে ওদের চ্যাট নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করে বসবে না তো ? ঈশ, সাথে মন্দিরার ফোনটা নিয়ে এলে কি যে ভাল হত। শয়তানটা নিজে ঘরে বসে মজা করছে আর আমাকে বাঘের সামনে ফেলে দিয়েছে। দাঁড়ানা, বাড়ি ফিরে এমন চুল টানবো না তোর, জন্মের সাধ মিটিয়ে নেব। খুউব না ?

কিন্তু ডলি আন ইজি ফিল করছে বুঝতে পেরে হিরু ওকে আর বেশি ঘাঁটালো না। লাঞ্চ সেরে ডলিকে নিয়ে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে ওকে একটা ক্যাবে তুলে দিল ওরা। হিরু কাল নবমীর দিন সকালে বিরাটিতে আসবে   ওদের পাড়ার পূজো দেখতে যাবে কথা দিয়ে ডলিকে বলল, ‘মন্দিরা, কাল যখন বিরাটি যাব তোমার কোন বন্ধুর সাথে আমার এই বন্ধুকে আলাপ করিয়ে দিও। ওরও তো একটা হিল্লে করতে হবে, তাই না ?’ বলে মঞ্জিলের  দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে হিরু। মঞ্জিল একটু মুচকি হাসল শুধু, কিন্তু ডলি ভীষণ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে বলল, ‘হ্যাঁ, আমার এক বন্ধু আছে ডলি। ওর সাথে তোমার এই বন্ধুর বেশ মানাবে। কালই আলাপ করিয়ে দেব।’ বলেই ফিক করে হেসে ট্যাক্সিতে উঠে বসল ডলি। স্বপ্নালু চোখে হাত নেড়ে দুজনকে টা টা করে বেরিয়ে গেল ডলি।  

মঞ্জিল সেনকে ডলির ভীষণ ভালো লাগে আজ। আর সেই জন্যই হঠাৎ ওর মুখ দিয়ে নিজের নামটাই তখন বেরিয়ে এসেছিল। মন্দিরাকে গিয়ে সব খুলে বলতে হবে মঞ্জিলের কথা। আর হিরুকে পছন্দ করে মন্দিরাও যে কোন ভুল করে নি সেটা ওকে কনফার্ম করে দিতে হবে। ছেলেটা সত্যিই সুন্দর এবং ভদ্র ছেলে। শুধু ও আজ ডলি যে মন্দিরা নয় সেটা সত্যিই বুঝে গেল কিনা কে জানে।

ডলির কাছে সব শুনে মন্দিরা হেসেই কুটি পাটি। ডলিকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে আদর করে বলল, ‘যাক, এবার মঞ্জিল সেনের শুধু না, তোরও একটা হিল্লে হয়ে গেল বল।’ ডলি লজ্জায় লাল হয়ে যায়।

সেই দিনই রাতে মন্দিরার কাছে হিরুর একটা ম্যাসেজ এলো। সাথে ওরই একটা ছবি। হিরু লিখেছে, ‘মহারাণী আজ তার বান্ধবী ডলিকে পাঠিয়ে আমার পরীক্ষা নিয়ে একদিকে ভালই করেছেন। আমার বন্ধুর ওকে খুব মনে ধরেছে। আমি মঞ্জিলকে পরে বলেছি যে এই মেয়েটাই হল ডলি আর সেও যে তোকে পছন্দ করে সেটা তো বোঝাই গেল। তা, কাল আবার আরেকজনকে ডলি সাজিয়ে হাজির কোর না। তোমারই একটা সুন্দর পুরানো ছবি তোমাকেই পাঠালাম। এটাই তোমার ফেস বুক প্রোফাইলে দিয়ে দাও, এখনই।’

মন্দিরা খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠে মোবাইলটাকেই কয়েকবার চুমু খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওর প্রোফাইল পিকচারে সেই পাঠানো ছবিটা বসিয়ে দিয়ে জবাবে লিখল, ‘আমি জানতাম তুমি ঠিক বুঝে ফেলবে। ডলি সত্যিই তোমার বন্ধুর সাথে কথা বলেই ওর প্রেমে পড়ে গেছে। আমাকে এসেই বলেছে সব। কাল এসো, আমরা অপেক্ষা করব। আর ভাল কথা, কাল কিন্তু আমাদের বাড়িতে তোমরা দুই বন্ধু লাঞ্চ খাবে। আমি এখনই মাকে বলে রাখছি, ঠিক আছে ?’     

                   ———শেষ———