অতৃপ্ত আত্মা – উত্তম চক্রবর্তী।


রাত দেড়টায় ট্রেনটা এসে থামল বাদকুল্লায়। দুখানা প্লাটফর্মই শুনশান করছে। কোন মানুষের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু ওপারের প্লাটফর্মে দুটো কুকুর নিজেদের মধ্যে দৌড়া দৌড়ী করে খেলা করছে। এক নম্বর প্লাটফর্মে ট্রেন থেকে ঐ অতো রাতে শুধু প্রতীক আর একজন বুড়ো মানুষ নামল ট্রেন থেকে। এক মিনিটের মধ্যেই শিয়ালদা থেকে আসা রাতের শেষ ট্রেনটা হুইশেল মেরে চলে গেল স্টেশন ছেড়ে। মাঝপথে ঝড়ে রেল লাইনের ওভারহেড তার ছিঁড়ে পড়ায় ট্রেনটা কল্যাণী ষ্টেশনে এসে প্রায় আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিল। প্রায় সবাই নেমে বাসে করে গন্তব্যে চলে গেছে। এখন বাদকুল্লায় ট্রেন এসে পৌঁছল এই মাঝরাতে। প্রতীক হাতের ঝোলানো বড় ব্যাগটা কাঁধে ফেলে এগিয়ে গেল গেটের দিকে। সেখানে কোন টি টি বা চেকারের দেখা পাওয়া গেলো না। উঁকি মেরে দেখল টিকিট কাঊণ্টারের পিছনের ঘরে অল্প আলোয় একটা মাঝ বয়সী লোক টেবিলে মাথা নিচু করে ঘুমোচ্ছে। প্রতীক তাকে আর ডিস্টার্ব না করে বেরিয়ে এলো রাস্তায়।
প্রতীক বাগুইহাটির ছেলে। বাংলায় এম এ করে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় পাশ করে বাদকুল্লার একটা সরকারী স্কুলে বাংলার শিক্ষকের চাকরি পেয়েছে। বাদকুল্লা স্টেশন থেকে সেই গোপালপুর প্রাইমারী স্কুল প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দুরে, রবীন্দ্র নাথের লেখার সেই বিখ্যত অঞ্জনা নদীর ওপারে। যদিও সেই নদী আজ একটা বদ্ধ খালের চেহারা নিয়েছে। এতো রাতে ষ্টেশনের বাইরে কোন অটো বা ভ্যান কিছুই পাওয়া গেলনা। শেষে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবার পর একটা ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা এসে হাজির হল কোথা থেকে। ওপরে একজন বুড়ো দাড়িওয়ালা মুসলমান বসা, মাথায় সাদা টুপি। একটু ঝুঁকে রাস্তায় একমাত্র অপেক্ষমান সুদর্শন যুবক এক যাত্রীকে দেখে বুড়ো লোকটা জিজ্ঞাসা করল, ‘কত্তা কি গাড়ির জন্য দাঁড়ায়ে আছেন নাকি ?’
এতক্ষণে একটা মানুষের, তাও আবার ঘোড়ার গাড়ি সহ, দেখে প্রতিকের ধরে প্রাণ এলো যেন। রাস্তার টিমটিমে লাইটে মানুষটার মুখটা ভালো দেখা যাচ্ছিল না। প্রতীক জবাবে বলল, ‘হ্যাঁ, একটা গাড়ি খুঁজছিলাম। যাবেন নাকি গোপালপুর, ওখানে একটা প্রাইমারী স্কুল আছে না, সেখানেই যাব। যাবেন তো বলুন কত নেবেন ?’
লোকটা খ্যাক খ্যাক করে হেসে বলল, ‘আপনে হলেন গিয়ে আমাদের গ্রামের অতিথি, আপনার কাছ থেকে টাকা নিমু ক্যামনে। ঐপাড়ে এতো রাতে তো কেউ যাইব না। আপনে চলেন আজ রাতটা আমাগো দালানে থাইক্যা কাল সকালে যাইবেন খন। এতো রাতে গাড়ি পাইবেন না কত্তা। তাছাড়া আরবান্দি পুলের ঐ পাড়ে রাতের বেলা কেউই যাইব না কত্তা। ন্যান ন্যান, উইঠঅ্যা পড়েন। আর খাড়াইয়া থাকবেন না। আমাগো অনেকটা যাইতে হইব।‘
লোকটার বাঙ্গাল ভাষায় আন্তরিক ভাবে অনুরোধটাকে ফেলতে পারল না আদতে বাঙ্গাল প্রতীক। ওর কথার মধ্যে কেমন যেন একটা জাদু ছিল যেটা অগ্রাহ্য করা ছিল ওর সাধ্যের বাইরে। টাঙ্গা গাড়ির পিছনে দিকের সিটে উঠে বসল। গাড়িটা একটু নড়ে উঠে রওনা দিল এক অজানা গন্ত্যব্যে। প্রতীকের কাল জয়েনিং আছে। ভাবল যাক, আজ বাকি রাতটুকু এদের দালান বাড়িতে কাটিয়ে কাল সকালে একেই বলতে হবে ওকে গোপালপুর স্কুলে পৌঁছে দেবার জন্য। টাঙ্গার পিছনের সিটে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে গাড়ির ঝাঁকুনিতে প্রতীকের চোখ বুজে এলো। টাঙ্গাটা তখন দুইপাশের ঝোপ ঝাড় ও পিছনের ধু ধু করা পাটখেত ছাড়িয়ে ছুটে চলেছে গন্ত্যব্যে।
প্রতীকের বয়স এখ আঠাশ বছর। বাড়িতে মা বাবা আর একটা ছোট বোন। বাবা নিজেও হাই স্কুলের টিচার ছিলেন। এখন রিটায়ারের পড়েও বাড়িতে বসে ছাত্র ছাত্রীদের টিউশন পড়ান। প্রতীকের ছোট বোন ওর চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট ; দিয়া এখন রাজা মনিন্দ্র চন্দ্র কলেজে বি কম পড়ছে, সেকেন্ড ইয়ারে।
প্রতীকের হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল একটা মেয়েলী হাতের মিষ্টি ছোঁয়ায়। চোখ খুলে দ্যাখে একটা বিশাল বড় ঘরে সাদা ধবধবে চাদর বিছানো বিছানায় ও শুয়ে আছে। মাথার ওপরে একটা হাল্কা ডিম লাইট জ্বলছে। আর ওর বালিশের পাশে বসে কপালে হাত রেখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে একটি অসাধারণ সুন্দরী মেয়ে। পরনে শুধু মাত্র একটা সুন্দর কাঁচুলি ও রঙ্গিন সায়া পরা মেয়েটির বয়স খুব বেশি হলে বাইশ তেইশ হবে। ওর চোঁখের দৃষ্টিতে দুষ্টুমি ভরা। প্রতীকের মাথায় হাত বোলাচ্ছিল মেয়েটা। এবার ধীরে ধীরে সেই হাতের নরম আঙুল গুলি নেমে এলো ওর ঘাড়ে, তারপর মুখের পাশ দিয়ে গলায় এসে ওর সার্টের বোতাম খুলতে শুরু করল সেই সুন্দরী মেয়েটি।
প্রতীকের নাকে একটা অদ্ভুত আঁতরের মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছিল মেয়েটির শরীর থেকে। সেই গন্ধে যেমন আছে উগ্র মাদকতা তেমনই আছে এক অদ্ভুত সন্মোহনী শক্তি। তাকিয়ে দেখল মেয়েটির বাতাবী লেবুরে মত স্তন ফেটে বেরিয়ে আসছে ওর কাঁচুলির বিভাজন ভেদ করে। প্রতীক কেমন যেন অসহায়ের মত তাকিয়ে রইল মেয়েটির চোখের দিকে। যেন সেই চোখ ওকে এক অজানা দেশে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। জীবনে প্রথম সমুদ্র দেখে মানুষ যেমন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় প্রতীকও সেইরকম হতবাক হয়ে মোহাচ্ছন্নের মত হয়ে পড়ে রইল। মেয়েটি কিন্তু মুখে কিছুই বলছিল না, শুধু হাসছিল। মেয়েটি এবার একে একে প্রতীকের সার্ট, গেঞ্জি, প্যান্ট ও জাঙ্গিয়া সব খুলে ওকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ফেলল। প্রতীকের শরীর ধীরে ধীরে উত্তেজিত হতে থাকে। পুরুষাঙ্গ শক্ত হয়ে যায়।
মেয়েটি এবার উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকেও সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে নিলো। যেন একজন উর্বশী দেবরাজের সামনে রতিকলা প্রদর্শনের জন্য তৈরি। সামনেই সুসজ্জিত ঘরের এই বিছানায় প্রতীক রূপী দেবরাজ শায়িত। মেয়েটি প্রতীকের পায়ের পাতা থেকে শুরু করল ওকে লেহন করা। ওর গরম জিভের ছোঁয়ায় প্রতীক কেঁপে কেঁপে উঠতে থাকে। মেয়েটি প্রতীকের পুরুষাঙ্গ ধরে নিজের জিভের ডগা দিয়ে তাকে বার বার হাল্কা ভাবে ছুঁতে থাকে। প্রতীক উত্তেজনায় চোখ বন্ধ করে সেই শিহরনের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে থাকে। সম্পূর্ণ উলঙ্গ ভরা যৌবনবতী মেয়েটি এবার উঠে বসে প্রতীকের উপর। প্রতীক সেই মুহূর্তে ভুলে যায় ও কে কোথা থেকে আর কী করেই বা এখানে এলো। জীবনে এই প্রথম একটা সুন্দরী নারীর বাহুবন্ধনে এসে তার কামনার শিকার হয়ে নিজেকে উজার করে শরীর শরীর খেলায় মেতে উঠল।
প্রায় আধঘণ্টা এসব চলার পর সুন্দরী এলিয়ে পড়ল প্রতীকের উদাম দেহের উপর। প্রতীক তখনো উজ্জিবিত সৈনিকের মত লড়াইয়ের ময়দানে একাই যেন তলোয়ার ঘুরিয়ে চলেছে। একটু বাদে অপর পক্ষের আত্ম সমর্পণে প্রতীক নিজেও ঝিমিয়ে পড়ে গভীর ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে। তখন পর্যন্ত সেই সুন্দরী ওর গায়ের উপর শুয়ে তার পরিপুষ্ট নরম বুকের নিচে চেপে ধরে আছে প্রতীকের রোমশ বুকের ছাতি। যেন একজন সঙ্গম ক্লান্ত স্ত্রী স্বামীর বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।
সকালে হঠাৎ চোখে রোদ্দুরের আলো এসে পড়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেল প্রতীকের। তাকিয়ে দেখল ও একটা বিছানায় বালিশে মাথা দিয়ে জানালার দিকে মুখ করে ঘুমচ্ছিল। ওর পরনের সার্ট প্যান্ট ঠিকই আছে তবে জুতোটা কেউ খুলে রেখেছে। প্রতীকের গত রাতের বাদকুল্লা স্টেশন থেকে নেমে একটা বুড়োর টাঙ্গাতে চড়ে কোন এক গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেবার কথা মনে পড়ে গেল। গাড়িতে উঠবার একটু বাদেই ও ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে আছে। এখন মনে হচ্ছে সেই বুড়োটা ওকে টাঙ্গা থেকে নামিয়ে এনে ওর জুতো খুলে ওকে এই বিছানায় শুয়ে দিয়েছিল। ভাল করে তাকিয়ে দেখল বুড়ো লোকটা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। হেসে জিজ্ঞাসা করল, ‘র‍্যাতে ভাল ঘুমাইসেন তো কত্তা ? আপনে ঘুমাইয়াসিলেন বইল্লা আর ডাকি নাই। ন্যান, এবার উঠঅ্যা হাত মুখ ধুইয়্য্যা লন। আমি চা নিয়াইতাসি। ঐ যে ঐ পাশে বাথরুম আছে কত্তা।’ বলে লোকটা চলে গেল ঘর ছেড়ে।
প্রতীক হাত ঘড়িতে দ্যাখে বেলা সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। ও তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেয়। বাথরুমটা বেশ বড়। বিরাট একটা বাথটব, গিজার, সাওয়ার, কাঁচ দেওয়া একটা দেওয়াল আলমারিতে দামী দামী বিদেশী সাবান শ্যাম্পু ও তেলের বাহার। মনে হয় বাড়িটা অনেক পুরানো এবং কোন বড় জমিদারের বাড়ি। একদম স্নান সেরে বেরিয়ে এসে একপাশের টেবিলের ওপর রাখা ওর ব্যাগটা খুলে ভালো পরিষ্কার সার্ট প্যান্ট পরে রেডি হয়ে নিলো প্রতীক। ঠিক তখনই একটা ঠ্যালা ট্রলিতে ওর জল খাবার ও চীনামাটির সুদৃশ্য কেটলিতে গরম চা নিয়ে এসে ঘরে ঢোকে সেই বুড়ো লোকটা। ঢুকেই হাসি মুখে বলল, ‘আমার নাম পরান মণ্ডল কত্তা। আমিই এই বাড়ির দেখভাল করি।’ কথা বলতে বলতে কেটলি থেকে কাপে চা ঢালতে থাকে পরান মণ্ডল। বড় একটা ডিশে রাখা চারখানা টোস্ট আর ডিমের অমলেট দেখতে পেল প্রতীক। ঝট করে এক চুমুক চা খেয়ে টিফিন সারতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ও। কিন্তু গত রাতের আর কোন কথাই মনে করতে পারল না। সমস্ত রাতটাই যেন একটা ভ্যানিশিং ইঙ্কের লেখার মত ওর মনের পৃষ্ঠা থেকে মুছে গেছে।
পরান মণ্ডল প্রতীককে সাথে নিয়ে বেরিয়ে এলো পর প্রতীক আবিস্কার করল ওকে বাড়িটার দোতলায় একটা বড় ঘরে রাখা হয়েছিল। সমস্ত বাড়িটাতে মনে হল আর কোন প্রাণী নেই। নিচের কোন ঘরে একটু টুকটাক শব্দ ছাড়া বিশাল বাড়িটায় আর কোন সাড়াশব্দ নেই। বারান্দার দুই পাশে অনেক গুলি বন্ধ ঘর। সিঁড়ির দিকে যাবার সময় চোখে পড়ল কাল রাতের সেই টাঙ্গাটা নিচের উঠোনে দাঁড়িয়ে। ঘোড়াটা যেন ওদের জন্যই অপেক্ষা করছিল। প্রতীকরা উঠবার সাথে সাথেই ঘোড়াটা দৌড়তে শুরু করে দিল। পিছনের সিটে বসে রাতে অর্ধেক ঘুমের কারণেই হোক বা অন্য কোন কারণে প্রতীকের চোখে ঘুম নেমে এলো। চোখে পড়ল সেই একই রাস্তা দিয়ে দুই পাশে ঝোপ ঝাড় আর পাটের খেত ফেলে গাড়িটা ছুঁটে চলেছে। গাড়োয়ানের সিটে বসে পরান মণ্ডল মুখে শুধু ‘হুরররর হুরররর’ করে চেঁচিয়ে চলেছে।
গোপালপুর প্রাইমারী স্কুলের গেটের সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করে প্রতীককে ডাকল পরান মণ্ডল। প্রতীক চোখ খুলে দ্যাখে ও গন্তব্যে পৌঁছে গেছে। গাড়ি থেকে নামতেই পরান মণ্ডল বলল, ‘আমি বিকালে ঠিক সময় এখানেই এসে দাঁড়ামু কত্তা। আপনি আবার অন্য কুথাও যাইয়েন না। আমিই আসুম আপনারে নিতে। আমি এখন তাইলে যাই কত্তা ?’
প্রতীক কেন যেন পরানের কথার অমান্য করবার কোন সাহস পেলনা। মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘ঠিক আছে, যাও।’
মুহূর্তে আবার মুখে একটা অদ্ভুত আওয়াজে ‘হুরররর হুরররর’ করতে করতে ঘোড়া ছুটিয়ে ওর টাঙ্গা নিয়ে বেরিয়ে গেল পরান মণ্ডল। প্রতীক এগিয়ে গেল দোতলা স্কুল বাড়িটার গেটের দিকে। কয়েকজন নীল প্যান্ট ও সাদা জামা পরা বাচ্চা ছেলে ওর পিছন পিছন যেতে থাকে। একপাশ থেকে নীল স্কার্ট ও সাদা জামা পরা দুটো বাচ্চা মেয়ে এগিয়ে এসে বলে ওঠে, ‘আপনিই বুঝি আমাদের নতুন স্যর ?’ প্রতীক মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ রে। আমিই তোদের বাংলা স্যর। কী নাম তোর ? কোন ক্লাসে পরিস ?’ মেয়েটি হেসে বলে, ‘আমার নাম মলি আর ও হোল গিয়ে পারুল। ক্লাস থ্রীতে পড়ি স্যর।’
হেড মাষ্টার বিনয় ভুষন মল্লিক খুব অমায়িক মানুষ। টিচার্স রুমে নিজে নিয়ে গিয়ে অন্য আরও প্রায় সাতজন শিক্ষক শিক্ষিকার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন প্রতীককে। তাদের মধ্যে চারজন পুরুষ এবং তিনজন মহিলা। দুজন মহিলা মাঝ বয়সী, আর একজন অর্পিতা সরকারের বয়স খুব বেশি হলে পঁচিশ হবে। অর্পিতা ইতিহাসের শিক্ষিকা। ফর্সা লম্বা খুব সুন্দর দেখতে মেয়েটি। বড় বড় পটলচেরা চোখে হাত জোড় করে নমস্কারের সময় মুচকি মুচকি হাসছিল অর্পিতা। প্রতীকের মনে হল এই মুখ ও আগেও কোথাও দেখেছে। কিন্তু কিছুতেই অর্পিতাকে ও কোথায় দেখেছে মনে করতে পারল না। অথচ মেয়েটি যেন ওর অনেকদিনের চেনা। প্রতীকের মুখেও হাসি ফুটে উঠল।
হেড মাষ্টার সবার সাথে আলাপ করিয়ে দিয়ে চলে গেলেন পর অঙ্কের মাষ্টার মৃদুল বসু প্রতীককে জিজ্ঞাসা করল, ‘তা উঠলেন কোথায় মশাই ? এখানে তো কোন হোটেল ফোটেল নেই। চেনা জানা কেউ আছে নাকি আপনার ?’
প্রতীক জানেও না ও কোথায় কার বাড়িতে উঠেছিল কাল। অতো বড় জমিদারের বাড়িতে কাল রাত কাটিয়ে আর সকালে পরান মণ্ডলের তৈরি দুর্দান্ত একটা টিফিন খেয়ে এসে ওর শরীর মন দুটোই বেশ উজ্জীবিত। জবাবে বলল, ’এই একজন চেনা জানা মানুষের বাড়িতে উঠেছি। খালের ওপারে বাড়ি।’ বলে প্রতীক আর কথা বাড়াল না। একটু হেসে ওর ডিউটি রোস্টারের দিকে তাকিয়ে চলে গেল ক্লাস থ্রীর বাংলা ক্লাস নিতে। অর্পিতার পাশ দিয়েই টিচার্স রুমের অন্য প্রান্তের দরজার দিকে এগিয়ে যেতে গিয়েই প্রতীকের নাকে এলো সেই একই আতরের তীব্র সুগন্ধ। প্রতীক জোরে শ্বাস টেনে সেই গন্ধটা ঘ্রনের ভিতর নিয়ে বেরোতে গিয়েই দেখতে পেলো অর্পিতা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
সকাল এগারোটা থেকে শুরু হয়ে সারাদিনে ওর ক্লাস হল মোট চারখানা। মাঝে ছিল টিফিন ব্রেক। প্রতীক টিচার্স রুমে গিয়ে দেখে হেড মাষ্টার ওর জন্য প্রথম দিনের চাকরীর অনারে এক প্লেট বিরিয়ানি আনিয়ে রেখে দিয়েছেন। আর সেই সুযোগে পছন্দ অনুযায়ী আরও পাঁচজন টিচারের জন্যও ভেজ ও নন ভেজ বিরিয়ানি আনিয়েছেন স্কুলের পয়সায়। প্রতীকের ওদের এই আতিথেয়তা বেশ ভাল লাগল। খেতে খেতেই সবাই গল্প করছিল। মৃদুল বসু জিজ্ঞাসা করল, ‘আজ তো স্কুল আপনাকে খাওয়াল, কিন্তু কাল থেকে কী টিফিন বাড়ি থেকে নিয়ে আসবেন নাকি কিনে খাবেন মশাই ? এখানে আসে পাশে তেমন ভাল খাবার কিন্তু পাবেন বা। এই দেখুন না এই বিরিয়ানি এসেছে সেই আরবান্দি পুলের একটা রেস্টুরেন্ট থেকে। রোজ তো আর সেখান থেকে আনা যাবেনা। তাহলে কী করবেন ভেবেছেন ?’
জবাব দিল অর্পিতা। হাসি মুখে বলল, ‘আমার বাবার একটা হোটেল আছে। আপনার যদি অসুবধা না হয় আমিই রোজ আপনার জন্য টিফিন নিয়ে আসব প্রতীক বাবু। আপনাকে বাইরের খাবার খেতে হবেনা। একদম বাড়ির তৈরি খাবার খাবেন। আমি নিজেও সেই হোটেলে তৈরি খাবারই খাই রোজ।’
অর্পিতার প্রস্তাবে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল প্রতীক। মাথা নাড়িয়ে শুধু জিজ্ঞাসা করল, ‘সে তো খুব ভালো কথা। আমি আপনাদের হোটেলের খাবারই খাব। তবে হ্যাঁ, টাকা নিতে হবে কিন্তু। বিনা পয়সায় খাওয়ালে চলবে না।’
অর্পিতা খিল খিল করে হেসে উঠল। হাসবার সময় ওর ঝকঝকে দাঁত দেখতে পেলো প্রতীক। ওর মুখের সামনের দিকে দুই ধারে দুটি গজ দন্ত দেখা গেল। এরকমই গজ দন্ত ছিল সেই মুখে। কিন্তু কে সেই অর্পিতার মত মেয়েটি ? তাকে প্রতীক কোথায় দেখেছে ? কেন যেন অর্পিতাকে ওর ভীষণ চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে করতে পাড়ল না। অর্পিতা হেসে বলল, ‘আচ্ছা বাবা, আপনার কাছ থেকে টাকা নেব। হলেন তো এবার খুশি ? কাল থেকেই কিন্তু আমি আপনার জন্য লাঞ্চ নিয়ে আসব। খেয়ে দেখবেন কেমন রান্না আমাদের হোটেলের।’
ইংরাজির টিচার বিপ্লব দাশগুপ্ত জবাব দিয়ে বলল, ‘আমি খেয়েছি অর্পিতার বাবার হোটেলের রান্না। দারুণ রান্না ওদের। আপনার ভাগ্য ভাল মশাই, অর্পিতা নিজে আপনার টিফিন নিয়ে আসবে বলেছে।’
মিসেস ঘোষ অর্পিতার পাশেই বসে ছিলেন। ওকে কনুয়ের গুঁতো দিয়ে বললেন, ‘তা আমাকে তো কোনদিন বলনি যে আপনার জন্য আমি নিজে টিফিন নিয়ে আসব। কি ব্যাপার হ্যাঁ ?’ বলে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে ভদ্রমহিলা। অর্পিতা লজ্জায় লাল হয়ে বলে ওঠে, ‘আপনি না একদম যা তা ঘোষ বৌদি। উনি একা মানুষ। একটু হেল্প করলে কী এমন দোষ ? বেচারা কোথায় হোটেল খুঁজতে বের হবে ?’ অর্পিতার কথায় সবাই হেসে ওঠে। বোঝা যায় সবাই ওকে ভালবাসে।
ঠিক বিকাল সাড়ে চারটায় স্কুল ছুটি হয়ে গেল। টিচার্স রুমে আরও কিছুক্ষণ সবার সাথে আলাপ পরিচয় সেরে গল্প করে পাঁচটার সময় স্কুলের গেটে এসে দাঁড়াল প্রতীক। বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েরা ততক্ষণে দৌড়ে সবাই স্কুল থেকে বেরিয়ে গেছে। গেটের সামনেটা খালিই ছিল। উল্টো দিকের চায়ের দোকানে বসে কয়েকটা ছেলে শুধু তাকিয়ে ছিল গেটের দিকে। গেটের বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকাতেই বাঁ দিকে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো টাঙ্গা গাড়িটা চোখে পড়ে গেল প্রতীকের। সমানের গাড়োয়ানের জায়গায় বসে ছিল পরান মণ্ডল। কিসের যেন এক অমোঘ আকর্ষণে প্রতীক এগিয়ে গেল সেই গাড়ির দিকে। আর একটা লাফ দিয়ে পরানের ঘোড়া ছুঁটে চলল ওদের বাসার দিকে।
বিকালের আলো তখন ফিকে হয়ে আসছিল। স্কুল থেকে একটু এগোতেই রাস্তাটা হঠাৎ ডান দিকে মোড় নিলো। প্রতীক লক্ষ্য করল আবার সেই ঝোপ ঝাড় আর পিছনে পাটের খেতের কাঁচা রাস্তাটায় উঠে পড়ল ওদের টাঙ্গা গাড়ি। চারিদিকে সবুজের সমারোহ দেখতে দেখতে এক আবেশের মাঝে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল প্রতীক। কাণে শুধু ভেসে আসতে লাগল পরান মণ্ডলের সেই অদ্ভুত স্বরের ডাক ‘হুররর হুররর’। কিছুক্ষণ বাদে গাড়িটা থেমে গেল এক জায়গায়। প্রতীকের ঘুম ভেঙ্গে গেল, দেখল রাস্তার এক ধারে দাঁড়িয়ে ওদের গাড়িটা। বাইরে ঘন কালো অন্ধকার। একটু দুর দিয়ে নদীর জল বয়ে যাচ্ছে দেখা গেল। আর নদীর পাড়েই একটা শ্মশানে কারা একজনের মৃতদেহ দাহ করছে। গনগণে আগুনের হল্কা উঠছে। প্রতীক বুঝতে পারল না ও ঠিক কোথায় আছে এখন।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছিল অনেক্ষন আগেই। নদীর ধারে শ্মশানের পাশে ওদের গাড়িটা কেন থামাল পরান মণ্ডল প্রতীক সেটাই বুঝল না। ব্যপারটা জানবার জন্য নামতে গিয়ে দেখল ওর পা টা কেমন যেন অবশ হয়ে আছে। নাড়াতেও পাড়ছে না। প্রতীক সজোরে চেঁচিয়ে উঠল, ‘আরে ও পরান ভাই, থামলে কেন এখানে ? চলো, রাত হয়ে গেলো তো।’
পরানের গলার স্বর এলো সামনের দিক থেকে। ‘এই তো কত্তা, হইয়ে গ্যাসে। এই এবার চলছি। আপনি চিন্তা করবেন নাতো। রাত তো সবে শুরু হইল। অতো ডরেন ক্যান ?’
পরান মণ্ডলের কথা শেষ হতেই সামনের সিটে কেউ একজন উঠে বসল বোঝা গেল। প্রতীক ভাবল হয়ত পরান নিচে নেমেছিল কোন কাজে, এবার উঠল গাড়িতে। না, এতো পরান ছিল না ! পরান এরপর উঠে বসেই মুখ দিয়ে সেই অদ্ভুত ভাবে ‘হুররর হুররর’ করে চেঁচিয়ে উঠল পড়েই গাড়িটা রওনা দিয়ে দিল। নিশ্চিন্ত হয়ে প্রতীক আবার চোখ বোজে। ওর পিছনের সিটটা অনেক উঁচু হওয়ায় সামনের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। প্রতীক ভাবে লোকটার কোন বন্ধুকে হয়ত তুলে নিল একই রাস্তায় যাবে বলে।
পরানের গাড়ি থামল একদম জমিদার বাড়ির ভিতরে ঢুকে। কেউ একজন নেমে আগে ঢুকে গেল বাড়িতে। পরান পিছনে দিকে এসে ডাকল প্রতীককে, ‘ও কত্তা, উঠেন এইবার। বাড়ি তো আইস্যা গ্যাসে। নামেন, নামেন কত্তা।’
প্রতীক গাড়ি থেকে নামল পরে ওর নজর গেল ওপরের ঘরের দিকে। ও যেই ঘরটাতে ছিল কাল রাতে সেটাতে কেউ যেন দরজা খুলে ঢুকে গেল মনে হল। আলো আঁধারিতে মনে হল একজন মেয়েছেলেকেই দেখতে পেল প্রতীক। পাশের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে গিয়ে প্রতীকের নাকে এলো সেই তীব্র আঁতরের গন্ধটা, যেটা আজই ও অর্পিতার পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে পেয়েছিল। এই গন্ধটা ওর খুব চেনা। ও কোথায় পেয়েছিল সেটা মনে করবার চেষ্টা করল প্রতীক। ভাবল আজ পরানকে জিজ্ঞাসা করতে হবে সব। এই জায়গাটার নাম কী, এটা ওদের স্কুল থেকে কতদূরে, এই বাড়িতে আর কে কে থাকে, তারা সব কোথায়, তাদের কাউকে এখন অবধি কেন দেখতে পাওয়া গেলো না ইত্যাদি। প্রতীক তাহলে কাল স্কুলে গিয়ে ওর অফিসে ও কলিগদের ওর এই ঠিকানাটা দিয়ে দিতে পারবে।
কিন্তু বারান্দা পার হয়ে ওর ঘরে ঢুকেই চমকে উঠল প্রতীক। ঘরের হাল্কা আলোয় দেখতে পেলো ওর বিছানায় একদম ফিনফিনে একটা গোলাপি শাড়ী পরে শুয়ে আছে অর্পিতা সরকার, ওদের ইতিহাসের টিচার। নিচে কোন ব্লাউজ পরা নেই। শাড়ীর নিচে ভরাট বুকটা স্পষ্ট মনে হল যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে। সমস্ত ঘরে মো মো করছে মিষ্টি ও তীব্র আতরের গন্ধ। অর্পিতা ওকে দেখেই দুই হাত তুলে কাছে ডাকল। প্রতীক হতবাক হয়ে সম্মোহিতের মত এগিয়ে গেল খাটের দিকে। অর্পিতা হাততালি দিল, ঘরে ঢুকল আরেকটা সুন্দরী যুবতি মেয়ে। তারও বয়স বাইশ তেইশ হবে। পরনে সালোয়ার কামিজ। সেই মেয়েটি ঘরে ঢুকেই প্রতীকের সামনে এসে ওর জামা কাপড় খুলতে শুরু করে দিল। প্রতীক যেন বোবা হয়ে গেছে। অবাক হয়ে মেয়েটি যা যা করছে সবই মেনে নিচ্ছে তখন। মেয়েটি ওকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে নিয়ে গেল বাথরুমে। প্রতীক দেখল বাথ টবে সাবান জল ভরা আছে। মেয়েটি ওকে ধরে ধরে বাথ টবে নামিয়ে দিল।
প্রতীক সাড়া দিনের ক্লান্তি শেষে ঠাণ্ডা জলের ছোঁয়ায় চোখ বুজে পুরো শরীর ভাসিয়ে দেয় টবের জলে। একটু বাদেই ওর মনে হল বাথটবে ও একা নয়। তাকিয়ে পরিষ্কার দেখল অর্পিতা সম্পূর্ণ খালি গায়ে ওর উদ্ধত স্তন ও আকর্ষণীয় শরীরের পসরা নিয়ে নেমে এলো একই বাথটবে। অন্য মেয়েটাকে দেখা গেল অর্পিতাকে টবে নামিয়ে দিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে দরজাটা বাইরে থেকে ভেজিয়ে দিল। হয়ত ওর ওপর আদেশ ছিল ওদের ডিস্টার্ব না করার।
অচিরেই দুটি সম্পূর্ণ উদাম শরীর বাথটবের ঠাণ্ডা জলকে গরম করে তুলল। অর্পিতা মুখে একটাও কথা বলছিল না। দুজন মুখোমুখি দু দিকে পা ছড়িয়ে বসেছিল ওরা। অর্পিতা এগিয়ে এসে জলের নিচে দিয়ে প্রতীকের সাড়া শরীরে ওর হাতের আঙুল বোলাতে থাকে। সেই আঙুলের ছোঁয়ায় কামনার ঢেউ ওঠে প্রতীকের দেহে। অর্পিতা এবার প্রতীকের ওপর ঝুঁকে পরে এবং ওর পরিপুষ্ট স্তন দুটো চেপে ধরে প্রতীকের বুকের ওপর। ঝক ঝকে দাঁত দিয়ে কামড় বসায় প্রতীকের কাণের নিচের দিকে। প্রতীকের পুরুষাঙ্গে হাত রেখে নাড়াচাড়া করতে থাকে। ধীরে ধীরে প্রতীকের পুরুষত্ব জেগে উঠে রুদ্র মূর্তি ধারণ করে। প্রতীক এবার অর্পিতার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। হাতের আঙুল দিয়ে ওর স্তনাগ্র খুঁটতে থাকে। অর্পিতা কেঁপে কেঁপে ওঠে আর প্রতীককে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরে। অর্পিতা আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওর একহাত দিয়ে প্রতীকের ইতিমধ্যেই শক্ত হয়ে যাওয়া গোপনাঙ্গ নিজের শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করায়।
প্রতীকের মুখ দিয়ে কিন্তু এবার ফিস ফিস করে বেরিয়ে আসে, ‘ওহ অর্পিতা, আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ …’। দুটো উত্তপ্ত শরীর ততক্ষণে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। অর্পিতা জবাবে প্রতীককে আরও জোরে পেঁচিয়ে ধরে ওকে সঙ্গমে ব্যস্ত রাখতে চায়। প্রতীকের শারীরিক ক্ষমতা যে অনেক বেশি সেটা আগের রাতেই বুঝতে পেড়েছিল মেয়েটা। আজ আবার প্রতীককে নিজের দুই ঠ্যাঙের মধ্যে বিধিয়ে রেখে দিল আর রতি ক্রীড়ার মজা নিতে থাকল। কিন্তু আজ প্রতীক একটু তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল যেন। কিছুক্ষণ বাদে প্রতীকের পুরুষাঙ্গ থেকে নির্জাস বেরিয়ে যাবার পর অর্পিতার নরম বুকে মুখ রেখে বাথটবেই ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল প্রতীক।
ঘুম যখন ভাঙ্গল তখন প্রতীক খাটে শোয়া। ওর পাশে কেউ নেই। জুতো ছাড়া ওর পোশাক সব সেই সকালের মতই আছে। প্রতীকের মনে পড়ল ও পরানের সাথে বাড়িতে ঢুকে দোতালায় উঠছিল। পরানের গাড়িতে কেউ উঠেছিল সেই শ্মশান ঘাঁট থেকেই। বোধ হয় তাকেই প্রতিক আগে আগে দোতলায় ওর ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে দেখেছিল তখন। তারপর ওর নাকে একটা তীব্র আঁতরের গন্ধ ভেসে আসে। এরপর কি হয়েছে ওর মনে নেই। প্রতীকের এখন বেশ ক্লান্ত লাগছে। খুব খিদে পেয়েছিল ওর। চেঁচিয়ে ডাক দিল, ‘ও পরান ভাই। কোথায় গেলে ? খিদে পেয়েছে তো।’ পরান মণ্ডল যেন ঘরের বাইরেই দাঁড়িয়ে ওর ডাকের অপেক্ষা করছিল। সাথে সাথে পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকে বলল, ‘রাতের খাবার তৈরি আছে কত্তা। এখুনি নিয়ে আসছি। আপনি ততক্ষণে জামা কাপড় বদলে ন্যান।’
কেন জানি প্রতীকের অর্পিতার কথা মনে হতে থাকে। ও উঠে বাথরুমে যায়, হাত পা ধুয়ে জামা কাপড় বদলে একটা পাজামা আর ঘরে পরার ফতুয়া গায়ে এসে কোনার টেবিলে গিয়ে বসে। সকালে এখানে বসেই টোস্ট অমলেট খেয়েছিল মনে আছে। একটু বাদেই পরান মণ্ডল খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে ঢুকল ঘরে। চারখানা পরোটা, মুর্গির মাংস, এক বাটি পায়েস ও দুটো রসগোল্লা সাজানো আছে ট্রেতে। প্রতীক রুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তে পরানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, ‘এই জায়গাটার নাম কী পরান ভাই ? এটা আমাদের স্কুল থেকে কতদূরে ?’
পরান মণ্ডল হেসে বলল, ‘এই জায়গার নাম ধর্ম দহ। আপনের ইস্কুল থিকা দুই আড়াই মাইল দুরে। ক্যান, আপনের কুন অসুবিধা হইতাসে না তো ? আমার উপর কড়া নির্দেশ আছে আপনার যত্ন আত্তি করার। কিছু লাগলে কইবেন খন।’
প্রতীক আবার জিজ্ঞাসা করে, ‘আচ্ছা, এই বাড়িতে আর কেউ থাকে না ? আমি তো কাউকেই দেখছি না। তবে আপনার সাথে আরও কেউ বোধ হয় এসেছে আজ তাই না ? আমার আগে আগে কে যেন ওপরের এই ঘরে ঢুকেছিল দেখলাম। একটা মেয়ে বোধ হয় এসেছিল তাই না ?’
পরান মণ্ডল একটা অদ্ভুত হাসি হেসে বলল, ‘ও আপনে দ্যাখসেন তাইলে ? ও তো আমার মাইয়া নুসরত। আমার সাথে নিচেই থাকে। আমাগো আইতে দেইখ্যা বোধ হয় ওপরে আইস্যা আপনার ঘর দোর গুছাইয়া রাইখ্যা গ্যাসে। খুব গুছাইন্যা মাইয়া। আর এই রান্না বান্না সব তো ও একা হাতেই করে। কেমন খাইতাসেন বলেন কত্তা। আমি গিয়া মাইয়াটারে কমু খন। আপনার ভাল লাগতাসে তো ?’
এমন রান্না সত্যিই অনেক দিন খায়নি প্রতীক। খেতে খেতেই ঘাড় নাড়িয়ে বলল, ‘দারুণ রেঁধেছে আপনার মেয়ে, খুব ভাল। বলবেন আমার মাংসটা খুব ভাল লেগেছে।’
পরান মণ্ডল বলল, ‘আপনি নিজেই কইবেন খন। আমি গিয়ে নুসরতরে পান সাজাইয়া পাঠাইয়া দিমু খন। পান খাইয়া আপনে শুইয়া পইরেন কত্তা। আমি তাইলে আসি। অনেক রাত হইল।’
পরান মণ্ডল আর দাঁড়ালো না। ঘর ছেড়ে বাইরে চলে যায়। প্রতীক খাবার খেয়ে বাথরুমে গিয়ে বেসিনে মুখ ধুয়ে ঘরে এসে অবাক হয়ে দ্যাখে ওর টেবিল পরিষ্কার, কোন প্লেট বা জলের গ্লাস নেই ওখানে। পর্দা সরিয়ে প্রতীককে অবাক করে ঘরে ঢুকল একটা সুন্দরী যুবতী। ওকে দেখে প্রতীক চমকে উঠল। আজ এই মেয়েটাকেই কোথায় যেন দেখেছে ও, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পাড়ছে না। মেয়েটি ঘরে ঢুকে হাসি মুখে একটা প্লেটে দুখানা পান প্রতীকের দিকে এগিয়ে দেয়। প্রতীক একটা পান তুলে নিয়ে ওকে বলল, ‘তোমার রান্না খুব ভাল নুসরত। কাল সকালে কী টিফিন খাওয়াচ্ছ বল। আমি কিন্তু লুচি আলুরদম খুব ভালোবাসি। পাড়লে সেটাই কোর।’
নুসরত নামের মেয়েটা ঘাড় নাড়িয়ে বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি এখন ঘুমিয়ে পড়ুন। অনেক রাত হয়ে গেছে।’
কিছুক্ষণ বাদেই ঘরের ডিম লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল প্রতীক। একটু বাদেই হঠাৎ ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল একটা শব্দে। চোখ পুরো না খুলে প্রতীক দরজার দিকে তাকিয়ে দ্যাখে দরজাটা আপনি আপনিই খুলে গেল। ঘরে ঢুকল অর্পিতা। ওর তখন পরনে একটা ফিনফিনে আকাশি রঙের নাইটি। বুকের সম্পদ উঁকি ঝুঁকি মারছে। অর্পিতা আজও নিচে কিছুই পরেনি। প্রতীক দুই হাত তুলে বিছানায় আহ্বান জানাল অর্পিতাকে। অর্পিতা মুহূর্তের মধ্যে বিছানায় ঝাপিয়ে পড়ে প্রতীকের পাজামা ও ফতুয়া খুলে মেতে উঠল শরীর শরীর খেলায়। নিঃশব্দে দুটো উত্তপ্ত শরীর দুই থেকে একে পরিণত হল যেন। প্রতীক কামড়ে ধরল অর্পিতার স্তনাগ্র। ফিস ফিস করে শুধু বলল, ‘আই লাভ ইউ অর্পিতা।‘

নুসরতের করা লুচি আলুরদম খেয়ে স্কুলে যাবার জন্য রেডি হয়ে বসেছিল প্রতীক। হঠাৎ কি মনে হল ও উঠে গিয়ে দরজার বাইরে পা রাখল। পাশের ঘরের দরজা ভেজানো ছিল। প্রতীক দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখল ওটা একটা রিডিং রুম, চারিদিকে বইয়ের তাকে অজস্র বই, মাঝে একটা বড় টেবিলের চার পাশে চারখানা চেয়ার রাখা। প্রতীক বন্ধ ঘরটা আরও ভাল করে দেখবার জন্য ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দেখল উল্টো দিকের দেওয়ালে একটা বড় তৈল চিত্র টাঙ্গানো আছে। প্রতীক এগিয়ে গিয়ে ছবিটা দেখে চমকে ওঠে। নব বিবাহিতা বধুর বেশে ঘোমটা মাথায় অর্পিতা একটা কারুকার্য করা দামী শেগুন কাঠের সিংহাসনে বসে ওর দিকে তাকিয়েই যেন হাসছে। ছবিটা অনেক পুরানো আর তার ওপর একটা ধুলোর আবরন পরে গেছে যেন। এগিয়ে গিয়ে ফু দিয়ে ধুলো উড়িয়ে প্রতীক দ্যাখে ডেট লেখা ১৪, ০৫, ১৯২৫।
প্রতীক অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ছবিটার দিকে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা ফটো তুলে নেয়। ছবির মহিলার চোখ দুটো এতোটাই জীবন্ত যে দেখে মনে হচ্ছে ওর মনের কোণে অনেক কষ্ট অনেক অভিমান সেই ছবির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। হঠাৎ পায়ের শব্দে পিছন ফিরে তাকায় প্রতীক। পরন মণ্ডল এসে দাঁড়িয়েছে পিছনে। প্রতীক জানতে চাইল, ‘এই ছবিটা কার পরান ভাই ?’
পরান মণ্ডল ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ইনি ছিলেন এই জমিদার বংশের শেষ বহুরানী কত্তা। ওর নাম ছিল মনোরমা। এই পরিবারের শেষ জমিদার শ্রীযুক্ত বাবু রাজ চন্দ্র মজুমদারের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। মনোরমার সাথে বিয়ে হবার পর মাত্র তিনদিন বাদেই ইংরাজ সৈন্যদের আক্রমণে বন্দুকের গুলিতে রাজ চন্দ্র মারা যান। উনি বিপ্লবীদের গোপনে সাহায্য করতেন। ইংরাজদের কাছে খবর ছিল যে রাজ চন্দ্র ওর নাতুন বৌয়ের সাথে কুমিল্লা থেকে পনেরো জন বিপ্লবীকে এই বাড়িতে নিয়ে এসছেন তাদের আশ্রয় দেবেন বলে। সেইদিন সকালেই মনোরমা দেবীর এই তৈল চিত্রটা আঁকিয়ে এই ঘরে টাঙ্গিয়ে দিয়েছিলেন রাজচন্দ্র। আর ভোর রাতেই ইংরাজদের গুলিতে প্রাণ হারান। শুনেছি মনোরমা দেবীকে ইংরাজরা তুলে নিয়ে গেছিল। তারপর তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।’
প্রতীক জিজ্ঞাসা করে, ‘তারপর এই পরিবারের বাকিদের কী হয় ? তাদের বংশধররা কি আজও বেঁচে আছে ?’
‘না কত্তা পুরো পরিবারই এখান থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামে চলে গেছিল। এই বাড়িটা সেই থেকেই খালি পরে আছে। আজ প্রায় একশ বছরের ওপর আমি আর আমার পূর্ব পুরুষরা এই সম্পত্তি আগলে রেখেছি কত্তা।’ একটু থেমে গিয়ে পরান মণ্ডল বলে ওঠে, ‘চলেন কত্তা, আপনার কিন্তু স্কুল যাইতে দেরি হইয়া যাইব।’
প্রতীক হাত ঘড়িতে দ্যাখে বেলা ন’টা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল প্রতীক। কিন্তু ভাবতে থাকে ঐ ছবির সাথে ওদের স্কুলের অর্পিতার মুখের এতো মিল কী করে হল ? ছবিটা যেন ওকে কিছু একটা বলতে চাইছিল। কী বলতে চাইছিল ঐ মহিলা, যার নাম পরান মণ্ডল বলল মনোরমা মজুমদার। এদের বংশের নিশ্চয়ই আরও অনেক ইতিহাস আছে। আজ স্কুলে একটু খোঁজ নিতে হবে।
কিন্তু স্কুলের গেটে নামিয়ে দিয়ে পরান মণ্ডল মুখটা গম্ভীর করে একটু কঠিন ভাবে বলল, ‘আপনি কিন্তু আমাদের ঐ বাড়ির কথা আর কারুর সাথে আলোচনা করবেন না। কোথায় থাকেন কাউকে বলতে যাবেন না যেন কত্তা। তাইলে আপনাকে সকলে হাজারটা প্রশ্ন করব। কী দরকার আপনার এই সবে। বুঝলেন কিনা কত্তা ?’
প্রতীক মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘ঠিক আছে। আমি কাউকেই কিছু বলব না পরান ভাই। তুমি বিকেলে ঠিক সময়ে চলে এসো কিন্তু।’ পরান মণ্ডল, ‘আইচ্ছা, আসুম খন।’ বলেই গাড়ি নিয়ে যেমন এসেছিল তেমনই চলে গেল। প্রতীক ভাবতে থাকে এই লোকটা ওর মনের কথা বুঝল কী করে ? তার মানে ওকে আপাতত চুপ করেই থাকতে হবে।
স্কুলে ঢুকে অর্পিতাকে দেখেই বুকের ভিতরে একটা তানপুরা বেজে উঠল যেন আজ। মেয়েটি লাল আর গোলাপি রঙের ম্যাচিং করা তাঁতের শাড়ি ব্লাউজ পরে এসেছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন ছবির সেই মনোরমা দেবী ফটো থেকে নেমে এই ধরতিতে মানব দেহ ধারণ করে ফিরে এসেছেন। টেবিলের একপ্রান্তে বসে মুগ্ধ হয়ে অর্পিতার রূপ সুধা পান করতে থাকে প্রতীক। কেন যেন ওর মনে হচ্ছিল অর্পিতার দেহের প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ওর খুব চেনা।
টিফিনে অর্পিতা আজ এনেছে চিংড়ি মাছের মালাই কারি আর ফ্রায়েড রাইস। অপূর্ব রান্নার স্বাদ। খুব তৃপ্তি সহকারে খেল প্রতীক। অর্পিতা সামনে বসিয়ে খাওয়াল ওকে। অন্য টিচাররা দেখে মুচকি হেসে পাশ কাটিয়ে গেলেও সেই ঘোষ বৌদি অর্পিতার দিকে তাকিয়ে কিন্তু চোখ টিপে টিপে হাসতে ছাড়ল না। অর্পিতা ঘুসি পাকিয়ে রাগ প্রকাশ করে আবার হাসতে থাকে। প্রতীক একবার ভাবে ওর ঠিকানাটা বলে দেবে। কিন্তু তার পরেই পরান মণ্ডলের হুশিয়ারি মনে করে চুপ করে যায়। শুধু নিচু গলায় অর্পিতাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘আচ্ছা, ধর্ম দহ জায়গাটা এখান থেকে কত দুরে ?’
লক্ষ্য করল অর্পিতা কেমন যেন চমকে উঠল। বলল, ‘কেন বলুন তো ? কাউকে চেনেন ওখানে ?’
প্রতীক জবাবে বলল, ‘না এমনি। আমার এক বন্ধু থাকত সেখানে। ওখানে একটা মসজিদ আছে তার কাছে কোথাও।’
অর্পিতা একই রকম নিচু স্বরে বলল, ‘একবার গেছিলাম। একটা অনেক পুরানো জমিদার বাড়ি আছে ওখানে।’
প্রতীক আর কথা বাড়াল না। চুপচাপ খেয়ে উঠে হাত মুখ ধুয়ে বেরিয়ে যায়। অর্পিতা দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। ওকে ইশারায় কাছে ডেকে বলল, ‘ওদের সবার সামনে বললাম না। আমি বাবার সাথে কথা বলেছি। আমাদের বাড়িতে আমি, বাবা আর আমার ছোট একটা ভাই থাকি। আপনার যদি থাকবার জায়গা নিয়ে কোন সমস্যা হয় তবে আপনি আমাদের বাড়িতে দোতলায় একটা খালি ঘর আছে, সেখানে থাকতে পারেন। এখান থেকে আমাদের বাড়ি হাঁটা পথে এক কিলোমিটারও নয়। আপনি ভেবে চিন্তে আমাকে বলবেন, কেমন ?’ কথাটা বলে একটা মিষ্টি হাসি হেসে চলে গেল অর্পিতা। তখনই প্রতীক লক্ষ্য করল অর্পিতার ঘাড়ের উপর একটা কালো জড়ুল আছে। এটা যেন ও কোথায় দেখেছে।

আজ ধর্ম দহর বাড়িতে ওর তৃতীয় রাত। গাড়ি থেকে নেমে প্রতীক দোতলায় উঠে ওর ঘরে ঢুকে দেখল ঘরটা টিপ টপ করে গোছানো। প্রতীক দরজা ভেজিয়ে দিয়ে জামা প্যান্ট খুলে জাঙ্গিয়া আর স্যাণ্ড গেঞ্জি পরে বাথরুমে ঢুকে দেখে সমস্ত বাথরুমে সেই আঁতরের গন্ধ ভুর ভুর করছে। ওর মনটা উরু উরু করে উঠল। এই গন্ধটা কেন যে ওকে এতো আকর্ষণ করে আজও ওর মাথায় ঢুকল না। প্রতীক গরমে ঘেমে গেছিল। ভাবল এখন একটা সাওয়ার খুলে স্নান করলেই শরীরটা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। প্রতীক জাঙ্গিয়া আর গেঞ্জি খুলে পাশের স্টিলের রডের তাকে রেখে সাওয়ার খুলে দেয়। আরামে ওর দুই চোখের পাতা বুজে আসে। হঠাৎ প্রতীক বুঝতে পাড়ে আরেকজন কেউ ওর শরীরের সাথে লেপটে একই সাওয়ারের নিচে স্নান করছে। প্রতীক তার মুখ দেখতে পায়না , শুধু অনুভব করতে পাড়ে নারী শরীরের মাংসল অংশ গুলি।
প্রতীক একটু ঘাবড়ে যায়। চোখ খুলে এদিক ওদিক তাকায়, কিন্তু কিছুই চোখে পরে না। প্রতীক আবার স্নানে মনোযোগ দেবার চেষ্টা করে। কিন্তু আবারও মেয়ে মানুষের ছোঁয়া অনুভব করে প্রতীক। ভাবে নুসরত কি ওর ঘরে ঢুকে ওকে স্নান করতে দেখে নিজেকে আর সামলাতে না পেরে সাওয়ারের নিচে এসে দাঁড়াল ! কিন্তু প্রতীকের সন্দেহ হল। জিজ্ঞাসা করল ‘কে নুসরত ? তুমিও কি এসেছ স্নান করতে ?’ সঙ্গে সঙ্গে কেউ যেন ওকে একটা ছোট্ট ধাক্কা মেরে সরে গেল।
প্রতীক চোখ খুলে দখল কেউ কোথাও নেই। ভাবল ওর মনের ভুল। নুসরত একটা অবিবাহিত গরীব ঘরের মেয়ে। কেন আসতে যাবে ওর সাথে জলকেলি করতে এই বাথরুমে। ওর বাবা জানতে পাড়লে তো ওকে একদম কেটেই ফেলবে।
রাতে নুসরত আর পরান মণ্ডল এলো ওর ঘরে খাবার নিয়ে। নুসরত খুব স্বাভাবিক ব্যবহার করছিল। প্রতীক আড় চোখে ওকে লক্ষ্য করতে থাকে। কিন্তু ওর মধ্যে কোন রকম বেচাল লক্ষ্য করে না। শুধু পরান যেন একটু চুপচাপ ছিল আজ। প্রতীক ভাবছিল পরান আবার অর্পিতাকে ওর ধর্ম দহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার কথাটা টের পায়নি তো ? রুটি আর মটন কিমার তরকারি দিয়ে , সাথে রাজভোগ আর রস মালাই খেয়ে রাতের খাবার শেষ করল প্রতীক। বাপ মেয়ে খাওয়ার পর এটো থালা নিয়ে বেরিয়ে যায়। একটু বাদেই নুসরত পান সাজিয়ে নিয়ে আসে। প্রতীক লক্ষ্য করে ওর চোখ ছল ছল করছে। ভাবে বাবা হয়ত কোন কারণে বকেছে ওকে।
প্রতীক ঘরের ডিম লাইট জ্বেলে শুয়ে পড়ল। চেষ্টা করছিল ঘুমবার। কিন্তু সকালে দেখা মনোরমার ছবিটার আর তার চেহারার সাথে ওদের স্কুলের দিদিমনির চেহারার আজব মিল কেন সেটাই ভাবছিল চোখ বুজে। একটু বাদেই প্রতীকের দেহে লাগল নারীর ছোঁয়া। আজ কিন্তু প্রতীক সম্পূর্ণ চেতনার মধ্যেই ছিল। একটু শিউড়ে উঠল। তবুও চোখ খুলল না। একটা নরম হাত ওর জামা কাপড় খুলতে শুরু করে দিয়েছে। প্রতীক গভীর ঘুমের ভাণ করে ঘাপটি মেরে পড়ে রইল। বুঝতে পাড়ল মেয়েটি ওর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুঁয়ে অনুভব করবার চেষ্টা করছে। প্রতীক ভাবল এ নিশ্চয়ই নুসরত। ওর সাথে রাত কাটাতে এসেছে। কিন্তু প্রতীক অবাক হয়ে গেল সমস্ত ঘর আবার সেই তীব্র আঁতরের গন্ধে ভরে গেছে, যেটা অর্পিতা ব্যবাহার করে।
প্রতীক নিঃশব্দে চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে দ্যাখে সকালে যেই মনোরমা দেবীকে ছবিতে দেখেছিল সেই মনোরমা ওর শরীরের উপর ঝুঁকে শুয়ে ওর পুরুষাঙ্গে মুখ লাগিয়েছে। কাঁধের কাছে একটা জড়ুল দেখা গেল। নারীর স্পর্শে প্রতীকের সমস্ত শরীরটা উত্তেজনায় শিরশির করে ওঠে। আঁতরের গন্ধটা ওকে বিবশ করে দেয়। মনোরমার উলঙ্গ দেহ প্রতীককে চূড়ান্ত ভাবে মাতিয়ে তোলে। প্রতীক মনে মনে অর্পিতার কথা ভেবে ওকে এবার জাপটে ধরে নিচে ফেলে ওর উপর চেপে বসে। মনোরমা চমকে তাকায় ওর দিকে আর ফিস ফিস করে মিষ্টি করে বলে, ‘তুমি তাহলে জেগে আছো প্রতীক ! আজ আমি তোমাকে অনেক অনেক আদর করব গো। কারণ আজই আমাদের শেষ দিন।’
প্রতীক মনোরমার স্তনে মুখ ঘসতে থাকে, স্তনাগ্রে কামর বসায়, ওকে চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দেয়। ভাবে এই আমার অর্পিতা, ওকে আমি খুব খুব ভালোবাসি। মনোরমা প্রতীকের আদরে উত্তেজিত হয়ে ওকে সঙ্গমে লিপ্ত করে। দুজনের শরীর মিলে মিশে একাকার হতে বেশিক্ষণ সময় লাগে না। প্রতীক ইউ টিউবে দ্যাখা বিভিন্ন রকম পদ্ধতিতে মনোরমার শরীরটা ওলট পালট করে ওকে আনন্দ দিতে থাকে। মনোরমার মুখ দিয়ে ‘উফ আহ’ শীৎকারের আওয়াজ বেরোতে থাকে। ওর ভাজিনা ভিজে যায়। প্রতীক ওর রুদ্রমূর্তি ধারণ করা তলোয়ারে বীর যোদ্ধার মত ওকে বিদ্ধ করে।
প্রায় আধ ঘণ্টা এসব করে দুজনেই ক্লান্ত হয়ে পড়ল। এবার মনোরমার বুকে মুখ গুজে প্রতীক জিজ্ঞাসা করে, ‘তুমি কে ? কেন তুমি শুধু রাতেই আমার কাছে আসো ? তোমার এই আঁতরের গন্ধ আমি কেন আমার স্কুলের অর্পিতার শরীরেও পাই ? তুমি কি অর্পিতা না মনোরমা দেবী ? আমায় তুমি কেন বললে আজ আমাদের শেষ রাত ? তার মানে তুমি কি আর আমার সামনে আসবে না ?’ একসাথে অনেকগুলি প্রশ্ন করে রণক্লান্ত প্রতীক ওর দুই হাতের আঙুল দিয়ে মনোরমার স্তন মর্দন করতে থাকে। ওর কেন যেন এই মেয়েটির পরিচয় না জানতে পাড়লে শান্তি হচ্ছিল না। কিছুক্ষণ আগেও সাওয়ার করবার সময় এই কি এসেছিল ?
মনোরমা বড় বড় হরিণ চোখে তাকিয়ে বলল, ‘আমি মনোরমা মজুমদার। এই বংশের ছোট বৌ। ইংরাজরা আমার বিয়ের তিন দিন বাদেই আমার স্বামীকে হত্যা করে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে গঙ্গার জলে চুবিয়ে মারে। আমি হলাম এক অতৃপ্ত প্রেতাত্মা। আমি মাত্র তিনদিনের জন্য জমিদার রাজ চন্দ্র মজুমদারের স্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি ওর সাথে সম্ভোগ করবার কোন সুযোগই পাইনি। তার আগেই উনি আমাকে ছেড়ে চলে যান।’
প্রতীক মনে মনে চমকে উঠল। সেকি, তার মানে ও একজন পেত্নির পাল্লায় পড়েছে। কিন্তু এই পেত্নি তো সেই ছোটবেলার শোনা মেছো পেত্নি না ! এতো এক অতৃপ্ত আত্মা। ভয়ে ভয়ে মুখ না তুলেই জিজ্ঞাসা করল, ‘তা তুমি আমাকেই বা বেছে নিলে কেন ? আমি তো পরান মণ্ডলের সাথে এখানে শুধু কয়েকদিন থাকতে এসছিলাম।’
‘তোমাকে আমিই পরানকে পাঠিয়ে এখানে ডেকে এনেছিলাম। তুমি হলে রাজ চন্দ্রের এই জন্মের শরীর। আমি ওর সাথে ঠিক তিন দিনের জন্য ঘর করেছি। তাই ঠিক তিন রাত্রি আমি তোমার সান্নিধ্য উপভোগ করতে চেয়েছিলাম। আজ সেই শেষ রাত। তুমি হয়ত টের পাওনি কাল আর পরশু রাতেও আমি তোমার শরীরের সাথে আমার শরীরের সঙ্গম ঘটিয়েছি। এই চরম আনন্দটাই আমি পেতে চেয়েছিলাম। আজ আমার আর কোন ক্ষোভ নেই। তুমি সেই জন্মে বিয়ের ঠিক তিন দিন বাদেই মারা গেছিলে। তাই আজকের পর আমি তোমাকে আর পাব না। আজকেই আমার আত্মাও মুক্তি পাবে। আমি আর কোনদিন এই পৃথিবীতে আসব না প্রতীক।’
প্রতীক লক্ষ্য করে মনোরমার গলার স্বর ধরে এসেছে। ওকে জাপটে ধরে চুমু দিতে থাকে আর আদরে আদরে ভরিয়ে দেয়। আবার জিজ্ঞাসা করে, ‘কিন্তু অর্পিতার সাথে তোমার মুখের এতো মিল কেন ? ওর শরীরেও ঠিক তোমার জড়ুল, আর এই আঁতরের গন্ধ আমি পাই কেন মনো ?’
মনোরমার ওকে মনো ডাকাটা পছন্দ হয়। রাজ চন্দ্রও ওকে এই নামে ডেকে জড়িয়ে ধরত। মনোরমা মুচকি হেসে বলল, ‘অর্পিতার চেহারা আমার মতই আমি জানি। আর মেয়েটা সেই একই আঁতর ব্যবহার করে তাও আমি জানি। তোমাকে অর্পিতা ভীষণ ভালোবাসে প্রতীক। তুমি অর্পিতাকে বিয়ে কর প্রতীক। মনে কর তুমি আমাকেই আবার বিয়ে করছ এই জন্মে। আমরা সেই জন্মে সুখী হইনি তো কি হয়েছে ? আজ আমি পরিপূর্ণ হলাম। এবার তুমি এই জীবনে আমার কথা ভেবে অর্পিতাকে বিয়ে করে সুখী হও প্রতীক। আমি এবার চলি প্রতীক, রাত শেষ হয়ে এলো। তুমি সুখী হও। ভাল থেকো আর অর্পিতাকে খুব খুব ভালবেসো।’
প্রতিক পাশে সরে শুয়ে অর্পিতার দুই গালে হাত রেখে ওকে একটা চুমু দিয়ে বলল, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি মনো।’ বলতে গিয়ে চোখ বুজে আসে। গভীর ঘুমে ঢলে পরে প্রতীক। ঘুম ভাঙ্গে একদম সকালে। তাকিয়ে দ্যাখে ইতিমধ্যেই ঘরে এসে জানলার পর্দা সরিয়ে দিয়ে গেছে পরান। সাড়া ঘর সূর্যালোকে ভোরে গেছে। ওর উলঙ্গ দেহ দেখেই গত রাতের সমস্ত কথা মনে পরে যায়। তাড়াতাড়ি উঠে চলে যায় বাথরুমে। মনটা খুব ভারাক্রান্ত হয়ে যায় প্রতীকের।
স্কুলে যাবার আগে পরানের পরামর্শে প্রতীক ওর ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে বের হয়। খালি ঘরটার দিকে চোখে বুলিয়ে মনোরমার শেষ কথাগুলি ভাবতে ভাবতে নিচে নেমে টাঙ্গায় উঠে বসে। স্কুলে পৌঁছে পরান জানায় ও আর আসতে পারবে না। প্রতীক যেন নিজের ব্যবস্থা অন্য কোথাও করে নেয়। প্রতীক ওকে এক হাজার টাকা দিতে চাইল। কিন্তু পরান কোন টাকা না নিয়ে বলল, ‘আপনি হইলেন আমাগো মালিক মানুষ কত্তা। আমার আপনাকে যতটুকু সেবা দেবার দিসি। ভালো থাইক্যেন আর সুখে থাইক্যেন।’ মুহূর্তে চোখের সামনে থেকে পরানের গাড়িটাও যেন ভ্যানিস হয়ে গেল। হতভম্ব প্রতীক দ্যাখে ও স্কুলের গেটে একা দাঁড়িয়ে আছে।
অর্পিতা কিছু একটা সন্দেহ করেছিল প্রতীককে চুপ থাকতে দেখে। টিফিনের পর টিচার্স রুমের বাইরে এসে ইশারায় ওকে ডেকে সামনের গাছতলায় গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আপনি ব্যাগ নিয়ে এসেছেন দেখলাম। আজ আপনি আমাদের বাড়িতে যাবেন, এখন থেকে ওখানেই থাকবেন আপনি। আমি আপনার সব দায়িত্ব নিচ্ছি প্রতীক বাবু।’ ওর চোখের ভাষায় একটা অদ্ভুত আবেদন লক্ষ্য করল প্রতীক।
এরপর প্রতীক রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে অর্পিতাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘ধর্ম দহের জমিদারদের কাহিনী কিছু জানেন আপনি ? আপনি গেছেন কোনদিন ঐ দিকে ? দেখেছেন সেই জমিদার বাড়িটা ?’
অর্পিতা ওকে অবাক করে দিয়ে বলল, ‘অনেক বছর আগে আমাদের স্কুল থেকে একবার ওদিকের একটা নদীর পাড়ে পিকনিক করতে গিয়েছিলাম। দেখেছি পুরানো সেই জমিদার বাড়িটা। ঝোপ আর জঙ্গলে ভরা। ওটাকে ওখানকার লোকেরা ভূতের বাড়ি বলে। শুনেছি ইংরাজরা ঐ বাড়ির শেষ বংশধরকে গুলি করে মেরে ফেলেছিল। আর তার বৌকে তুলে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছিল। আর কিছু জানিনা।’
প্রতীক ওর পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে মনোরমার ছবিটা দেখিয়ে বলে, ‘তুমিই সেই মনোরমা অর্পিতা। আর আমি ছিলাম সেই শেষ বংশধর রাজ চন্দ্র। এই জন্মে আমাদের আবার মিলন হবে মনো।’
——–শেষ——–