(২৫০ শব্দের গল্প )

বিষয় – প্রেম।

আজও ভালোবাসি         – উত্তম চক্রবর্তী।

আজ এতোবছর পরে ওর প্রথম ভালোবাসা অরিন্দমকে দেখে অবাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে রইল পিউ। সেই কলেজ জীবনে, একসাথে ঘোরাঘুরি, সিনেমা দেখা, বাড়ির অমতে বিয়ে করা আর প্রায় দুই বছর ওদের লোণ নিয়ে কেনা যাদবপুরের ফ্ল্যাটে স্বপ্নের সংসার করার টুকরো টুকরো ছবিগুলি চোখের সামনে ভেসে আসছিল পিউর। একবছর পর ওরা যখন সন্তান নেবে ঠিক করেও কিছুই হচ্ছিল না, ডাক্তার জানিয়েছিল পিউ কোনদিনই মা হতে পারবে না। দিনে দিনে অরিন্দমের বদলে যাওয়া, চাপা অশান্তি, কথা প্রায় বন্ধ আর শেষে বিছানা পর্যন্ত আলাদা হয়ে অবশেষে দুটি বছরের মাথায় ডিভোর্স হয়ে যাওয়া।

পিউ প্রথম থেকেই আত্ম নির্ভরতায় বিশ্বাসী। ডিভোর্সের পর আর বাপের বাড়ি ফিরে যায়নি। প্রথমে একটা হোস্টেল, এই হাসপাতালে এক বছরের নার্সিং ট্রেনিং নিয়ে চাকরি, আজ চার বছর বাদে পাইক পাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে একা থাকার অভ্যাস হয়ে যাওয়া। জানতে পারেনি যে প্রাক্তন আবার বিয়ে করেছে ওর বান্ধবী লীনাকে। আর আজ লীনার সন্তানের জন্ম দেবার জন্য এসেছে ওকে এখানে ভর্তি করতে। পিউ ইচ্ছা করেই মুখ ঘুড়িয়ে পাশ দিয়ে চলে গেল ওর ঘরে। কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে জানল লীনার বেড নম্বর।

লীনার ডেলিভারি হল একটা ফুটফুটে মেয়ে। কিন্তু সার্জারি কেস ছিল, আর তাই দু বোতল রক্ত দিয়ে বাঁচাতে হল লীনাকে। অরিন্দম বা লীনা কেউই কিন্তু জানতে পারল না যে সেই দুই বোতল রক্ত দান করে লীনাকে, ওর প্রাক্তনের বর্তমান জীবন সাথীকে বাঁচিয়েছে আর কেউ নয়, পিউ, এই হাসপাতালের এক সুন্দরী ডিভোর্সি নার্স। পিউ শুধু দুর থেকে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আশীর্বাদ করল ওর প্রাক্তন স্বামীর সন্তানকে, দু চোখ বেয়ে নেমে এলো স্নেহের রসে ভরা উষ্ণ জলের ধারা। পিউ যে আজও ভালোবাসে অরিন্দমকে।                                  

 ———-শেষ———–

বিষয় – সামাজিক।

অগ্নি শিখা        – উত্তম চক্রবর্তী।

অগ্নির স্কুল শিক্ষক বাবা অবসর করে ঘরে বসে সামান্য পেনশন ও টিউশনি করে সংসার চালান। ছেলে অগ্নি এম কম পাশ করে বাবার মত শিক্ষক হবার জন্য টেট পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেও চাকরির জন্য আজ দুই বছর যাবত কলকাতার রাস্তায় বসে আরও পাঁচ ছয়শো চাকরি প্রার্থীর সাথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু শনিবার বাড়ি আসে আর সোমবার সকাল বেলা উঠেই মেমারি স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে চলে যায় কলকাতায় রাস্তায় বসতে।  

অগ্নিদেব ভালোবাসে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ি সজল ঘোষের বড় মেয়ে শিখাকে। শিখা বছর দুয়েক আগে বি কম পাশ করে টেট পাশ না করেও চাকরি পেয়ে গেছে বাবার টাকার জোরে। ওর বাবার বন্ধু লোকাল পার্টির নেতা নিমাই গোস্বামী বলেছিলেন এখন নাকি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকের চাকরির বাজার দর যাচ্ছে পনের লাখ। সেটা ওঁদের দলের নেতার কাছে পৌঁছালেই সজলের মেয়ের চাকরি পাকা। সজল ঘোষ টাকার বিনিময়ে মেয়েকে মেমারিরই এক প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষিকার চাকরীতে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।

সেদিন কলকাতায় পুলিশ ওদের ডাণ্ডা মেরে তুলে দেয়। লাঠির ঘায়ে ভীষণ ভাবে আহত অগ্নিকে দেখতে ওর বাবাকে নিয়ে কলকাতায় ছুটে আসে শিখা। অনেকবার অগ্নিকে বুঝিয়েছিল ও এই আন্দোলনের সাথে নিজেকে না জড়িয়ে মেমারির ক্ষমতাশীল পার্টিতে নাম লেখালে আর কয়েকদিন ঝাণ্ডা নিয়ে ওদের সাথে মিছিল মিটিঙে যোগ দিলেই ও বাবাকে বলে অগ্নির একটা চাকরি জুটিয়ে দিতে পারত। কিন্তু অগ্নি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল।

হাসপাতালে অগ্নির বিছানায় বসে ওর ব্যান্ডেজ বাঁধা মাথায় হাত রেখে আজ শিখার ভিতরটা জ্বলে উঠল। জানাল কালই ওর চাকরি ছেঁড়ে দিয়ে শিখা কলকাতার পথে অগ্নির হয়ে এসে বসবে সেই আন্দোলনকারীদের সাথে, যাদের বঞ্চিত করে টাকার জোরে ও চাকরিটা পেয়েছিল। আজ শিখার নিজের প্রতি সত্যিই ঘৃণা বোধ হচ্ছে।   

 ———-শেষ———