* প্রথম প্রেম *                     – উত্তম চক্রবর্তী।

“প্রেম করব বললেই তো আর প্রেম করা যায়না। তার জন্য এলেম থাকা চাই।”

তপুর ম্যাসেজটার দিকে একটুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সৌম্য জবাব দিল,”তাহলে তোর তো কোন এলেমই ছিলনা। স্কুলের ব্যাক বেঞ্চার ছিলি। তুই কী করে শিউলিকে পটালি ? আর আমি ক্লাসের সেকেন্ড বয় হয়ে সেটা পারব না বলছিস ! এলেম মানেটা কী হ্যে ? আমি দেখতে হ্যান্ড সাম, সরকারী চাকরি করি। কলকাতায় নিজেদের বাড়ি, একটাই দিদি, তারও বিয়ে হয়ে গেছে। তাহলে মেয়েরা আমাকে পছন্দ কেন করবে না বলতে পারিস ? শালা, তোর মত ছেলে যদি শিউলিকে পটাতে পারে তাহলে আমি কেন পারব না রে ? আর ওর বন্ধু মেঘা আমাকে ভালই চেনে। আমার মনে হয় মেয়েটাও আমাকে পছন্দ করে। শালা, তুই শুধু আমাদের একটা এপো করিয়ে দে। বাকিটা আমি বুঝে নেব।” সৌম্যর বুকে অসীম সাহস তখন।

ওদিক থেকে ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের জবাব আসে,“শোন সৌম্য, শুধু দেখা করিয়ে দিলেই কি হবে নাকি ? আচ্ছা, তুই না হয় ওর সাথে একান্তে দেখাই করলি, তারপর কী বলবি ওকে সেটা ঠিক করেছিস কিছু ?” 

সৌম্য তখন ভুলে গেছে যে ও ওর অফিসে বসেই টিফিনের পর তপুর সাথে এই চ্যাটিং করছে। যদিও ওর কয়লাঘাটের রেলের অফিসে কাজের চাপ অতোটা নেই, যেটা আগে শিয়ালদায় ছিল। আর ঐ শিয়ালদা স্টেশনেই একদিন প্রথম দেখেছিল তপুর স্ত্রী শিউলির বান্ধবী মেঘাকে। মেঘা শুধু একবারই মাস্ক খুলেছিল। সেই থেকেই সৌম্য ওকে দেখে একদম ফিদা হয়ে যায়। এখন প্রায় রোজই শিউলির মারফৎ মেঘার সাথে আরেকবার দেখা করবার জন্য তপুকে যখন তখন ফোন করে ওকে চাপ দিচ্ছে আজ প্রায় দুই মাস হয়ে গেল। ওদিকে সৌম্যর বাবা মা আর দিদিও ওকে বিয়ের জন্য খুব চাপে রেখেছে।

“এই শোন, শিউলির সাথে প্রেম করবার সময় তুই কোন ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে এসেছিলিরে ? এসব ক্ষেত্রে কি ট্রেনিং নিয়ে তবে মাঠে নাবতে হয় ? আমি মেঘাকে কী বলব না বলব সেটা কি তুই আমাকে শেখাবি নাকি ? ঠিক আছে, তুই এক কাজ কর, আমাকে মেঘার ফোন নম্বরটা যোগাড় করে দে। শিউলিকে বল, ঐ তোকে দিয়ে দেবে খন। বাকিটা আমি বুঝে নেব। আমি নিজেই ওর সাথে একটা এপো ফিক্স করে নেব। তখন তুই শুধু হাঁ করে দেখিস আমাদের ।“  

দুদিন বাদে রবিবার সকালে ব্যাগ হাতে বাজার করে ফিরবার পথে পকেটের সেল ফোনে টুং টাং করে ম্যাসেজের শব্দ শুনে মল্লিক বাড়ির গ্যারেজের পাশের উঁচু বারান্দায় হাতের ব্যাগ দুটো নামিয়ে রেখে পকেট থকে ফোন বের করে সৌম্য দেখে একটা অচেনা নম্বর থেকে কেউ ম্যাসেজ করেছে। অদ্ভুত কয়েকটা কথা লেখা তাতে। “? তো নলুব নকে ? নচা তেরক খাদে থেসা রমাআ কিনা নিপআ ”

সৌম্যর তখন তাড়া ছিল। বাড়িতে মা বলে দিয়েছে তাড়াতাড়ি বাজার করে ফিরতে। সৌম্য ম্যাসেজটার মাথা মুণ্ডু কিছুই বুঝতে না পেরে আবার ব্যাগ হাতে তুলে নিয়ে বাড়িতে চলে এলো। নিজের ঘরে ঢুকে ফ্রেস হয়ে পড়বার টেবিলে বসে আবার ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে ম্যাসেজটার মানে বুঝবার চেষ্টা করতে থাকে সৌম্য। কিছুক্ষণ বাদেই সৌম্য মেসেজটার মানে উদ্ধার করে মনে মনে হাসতে থাকে। এটা নিশ্চয়ই মেঘার ম্যাসেজ। তপু ওকে মেঘার নম্বর দেয়নি, কিন্তু শিউলি নিশ্চয়ই মেঘাকে সৌম্যর নম্বর দিয়ে দিয়েছে। আর তাই এটা নিশ্চয়ই মেঘারই কাজ। মেঘা লিখেছে, “আপনি নাকি আমার সাথে দেখা করতে চান ? কেন বলুন তো ?” মেঘা হয়ত ইচ্ছা করেই সৌম্যকে ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়াবার জন্য ম্যাসেজটা উল্টো করে লিখে পাঠিয়েছে, আর সত্যিই সৌম্য তাতেই কট আউট।

সৌম্য জবাবে লিখল, ”নবাগ্যভা ইএ বেহ শিখু বখু লেনাজা। বীদে রেপা তেহ খাদে দগানা বেক তা। রপাব্যা রগ্যেভাসৌ টাকএ তো ইটায়াওহ খাদে থেসা রয়েমে তীমদ্ধিবু টাকএ তম রনাপআ ? “

মা এসে ওর টেবিলে টিফিন রাখতে গিয়ে দেখেন ছেলে ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। টেবিলের ওপর প্লেটটা রেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “কিরে, হাসছিস কেন ? ভালো কথা শোন, তোর মাসী একটা সম্বন্ধের কথা বলতে আসছে আজ। তুই আবার কোথাও বেরিয়ে যাসনা যেন। মাসীরা বেহালা থেকে রওনা দিয়ে দিয়েছে। আর আধ ঘণ্টার মধ্যেই কিন্তু নিউ আলিপুরে পৌঁছে যাবে। টিফিন খেয়ে বাড়িতেই থাকবি। আজ কোথাও বের হোস না।”

সৌম্য তখন অন্য জগতে। মেঘা যে ওর প্রেমে মজেছে সেটা ভালই টের পাচ্ছিল। অথবা শিউলি আর তপু দুজনেই বেশ করে ওর ব্রেন ওয়াশ করেছে , সেটাও হতে পারে। সৌম্য সেল ফোনের দিকে নজর রেখে টিফিন শেষ করবার আগেই ইনবক্সে মেঘার ম্যাসেজ ঢুকল। আর তার সাথে সাথে ঘরে ঢুকল ওর বাবা। সৌম্যর মনটা ছটফট করছিল মেঘার ম্যাসেজটা দেখবার জন্য। কিন্তু বাবা এসে বসলেন ওর খাটে আর প্রথমেই বললেন, “শোন খোকা। তোর মাসী একটা সম্বন্ধ আনছে আজ। কিন্তু তোর মার পছন্দ হলেও আমার কিন্তু ঐ বাঙ্গালদের সাথে কাজ করবার কোন ইচ্ছাই নেই। তুই সব শুনে টুনে মাকে পরে তোর পছন্দ হয়নি বলে দিস। আমি তাই তোকে আলাদা করে বলে গেলাম।”  

সৌম্যর মনটা নেচে উঠল। বাবার দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “ও তুমি চিন্তা করোনা বাবা। আমিও ঘটির মেয়ে ছাড়া বিয়েই করব না। মাকে পরিষ্কার জানিয়ে দেব। মাসীদের আসতে দাওনা। এসব নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে খন।”  সৌম্য চাইছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাবা ঘর ছেড়ে চলে যান। যাতে ও মেঘার ম্যাসেজটা খুলে দেখতে পারে। সৌম্যর কথায় খুশী হয়ে ওর বাবা উঠে চলে যেতেই সৌম্য শম্পার ম্যাসেজ খুলে পড়তে থাকে। মেঘা লিখেছে, “বাঃ বেশ তাড়াতাড়ি আমার ম্যাসেজটা বুঝে ফেললেন দেখছি ! ঘটে যথেষ্ট বুদ্ধি আছে বলতেই হবে। কিছু মনে করলেন না তো, আপনার সাথে এই ভাবে ইয়ার্কি করাতে। আসলে আমি চাইছিলাম যাতে আমার ম্যাসেজ অন্য কেউ পড়ে বুঝতে না পারে। ”

সৌম্য লিখেছিল, “আপনার মত একটা বুদ্ধিমতী মেয়ের সাথে দেখা হওয়াটাও তো একটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। তা কবে নাগাদ দেখা হতে পারে দেবী ? জানালে খুব খুশি হবে এই ভাগ্যবান।”   

মেঘা এবার লেখা সোজা করে জবাব দিয়েছে ঠিকই কিন্তু ওদের দেখা হবার ব্যাপারে কিছুই জানায় নি। সৌম্য ভাবল আগে একটু চ্যাটিং করে নেওয়া যাক। পরে না হয় ওদের এই দেশের ব্যাপারটা দেখা যাবে খন। সৌম্য এবার লিখল, “আপনার বাড়িতে কে কে আছেন ? আপনারা ক’ ভাই বোন ?”

“আমরা এক ভাই দুই বোন। আমার ওপরে দাদা আর নিচে একটা বোন আছে ?” মেঘার জবাব আসে।

“আমরা এক ভাই এক বোন। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে। তা আপনার শখ কী জানতে পারি কি ?” সৌম্যর মনে মেঘাকে নিয়ে এরকম অনেক প্রশ্ন এখন ঘুর ঘুর করছে। ওদিক থেকে মেঘা সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল, “আমি জানি সব। আপনার দিদির বম্বেতে বিয়ে হয়েছে। জামাই বাবু নেভিতে আছেন। দিদির একটা ছেলে। আপনি রেলে চাকরি করেন। আপনার শখ হল ইংরাজি সিনেমা দেখা আর মহম্মদ রফির গান শোনা। আপনি খুব ভাল মাংস রাঁধতে পারেন, সব জানি মশাই।”  

সৌম্য অবাক হয়ে যায়। মেয়েটা বেশ ভাল হোম ওয়ার্ক করে তবেই মাঠে নেবেছে খেলতে। আর ও কিনা বোকার মত শুধু ওর সাথে একবার দেখা করবার জন্য পাগলের মত তপুর পিছনে লেগে ছিল ! আরে গাধা, আগে তো সব খোঁজ খবর নিবি নাকি ? নিজের ওপর খুব রাগ হচ্ছিল সৌম্যর তখন। একটু ভেবে লিখল , “বাবা, মেঘা দেবী দেখছি আমার ব্যাপারে অনেক খবরই রাখেন। তা আপনার শখটা কী জানালেন নাতো ? সিনেমা দেখা, বই পড়া নাকি রান্না করা। কোনটা ভালবাসেন ?”

মেঘা জবাব দেয়, “আমি খুব ভালো হাতের কাজ জানি। মা আমাকে উলের কাজ, ক্রচেটের কাজ, সেলাইয়ের কাজ সব শিখিয়েছেন। আমি নিজের সায়া ব্লাউজ নিজেই সেলাই করি, টেলারে দেইনা।”

সৌম্য বুঝতে পারে মেয়েটা খুব সরল সোজা প্রকৃতির মেয়ে এবং বেশ বুদ্ধিমতী। সৌম্যর এরকম মেয়েই পছন্দ। আজকালকার মেয়েদের মত ফটর ফটর করে দুটো ইংরাজিতে কথা বলে আর পার্টিতে গিয়ে বা বারে গিয়ে হৈ হুল্লোড় করা মেয়ে সৌম্যর একদম পছন্দ না। এই ব্যাপারে ওর দিদির মতই একটু ঘরোয়া স্বভাবের ছেলে সৌম্য। মেঘার কথায় খুশী হয়ে এবার জিজ্ঞাসা করল, “তা আপনারা কি এদেশি নাকি ওপারের লোক ? আমরা কিন্তু এদেশি সেটা জানেন তো ?”

অনেকক্ষণ হয়ে গেল, কিন্তু মেঘার কোন জবাব এলো না। সৌম্য দেখল বেলা তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। সৌম্য মোবাইল হাতে ছাতে চলে গেল সিগারেট খেতে। বাবা মার সামনে কোনদিনই সিগারেট খায় না সৌম্য। ছাতে ঘুরে ঘুরে দুখানা সিগারেট শেষ করে অবশেষে হতাশ হয়ে আধ ঘণ্টা বাদে নিচে নেমে এসে স্নানে চলে যায়। মাসীরা এসে পড়েছে। ওর মাসতুতো বোন রান্না ঘরে মার সাথে গল্প করছে। আর সামনের ঘরে বসে মাসী আর মেসো বাবার সাথে ঐ সম্বন্ধ নিয়ে আলোচনা করছে। এদিকে সৌম্য বেচারা মেঘার এই একটা মেসেজের জবাবের জন্য ছটফট করছে সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে। একটু আগেই বাবাকে বড় মুখ করে কথাটা বলে এখন সৌম্য নিজেই চিন্তায় অস্থির। মেঘারা কোন দেশী না জানা পর্যন্ত ওর মন শান্ত হবে না। আর তারপর …?

দুপুরে মাসী মেসো ও বোনের সাথে একসাথে খাওয়া দাওয়া ও গল্প গুজব করে অনেকটা সময় কেটে গেল। সৌম্য কোনদিন মোবাইল নিয়ে খেতে বসে না। আজ ওর বাবা মাকে অবাক করে দিয়ে টেবিলের ওর প্লেটের একপাশে ফোনটা নিয়েই খেতে বসল সৌম্য। কে জানে, যদি মেঘার কোন ম্যাসেজ আসে।

ম্যাসেজ এলো যখন তখন বিছানায় শুয়ে অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে সৌম্যর সবে চোখে লেগে গেছে। কিন্তু হালকা ঘুমটা ভেঙ্গে গেল মোবাইলে টুং টাং আওয়াজ পেয়ে। দেখল মেঘা লিখেছে, “সরি। মার সাথে সত্যনারায়ণ পূজায় ব্যস্ত ছিলাম। তাই আপনার ম্যাসেজটার জবাব দিতে দেরি হল। কিছু মনে করবেন না। আজ পূর্ণিমা কিনা। আমাদের বাড়িতে প্রত্যেক পূর্ণিমার দিন সত্যনারায়ণ পূজা হয় আর সেদিন আমরা নিরামিষ খাই। বাড়িতে আজ খিচুরি রান্না হয়েছে।”

সৌম্যর তখন টেনশনে ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাবার মত অবস্থা। শুধু লিখল, “বাঃ, জেনে খুব ভালো লাগল।”

“আর হ্যাঁ, আপনারা ঘটি আমি জানি। আমরা কিন্তু ঢাকার লোক। আমি অবশ্য দেখিনি, কিন্তু বাবা মার দুজনেরই দেশ ছিল ঢাকায়। বাবার জ্যাঠারাতো এখনো বাংলাদেশেই থাকেন। বাবা মা আমি হবার আগে নাকি একবার ওদেশ ঘুরে এসেছেন। আমি অবশ্য যাইনি কোনদিন। কেন বলুন তো ? আমার দেশ জেনে আপনি কী করবেন মশাই ? আপনি কারও সাথে বন্ধুত্ব করবার আগে কি তার দেশ জেনে তবেই করেন নাকি ? এই যে আপনি আজ সকালে বাজার হাট করলেন, তাদের দেশও কি জিজ্ঞাসা করেছিলেন নাকি ? ”  মেঘা ওদিক থেকে একটা ইয়র্কার মেরে সৌম্যকে বোল্ড আউট করে দিলো।  

সৌম্য এই কথার কোন জবাব খুঁজে পাচ্ছিল না। জাতপাত ধর্ম বা ঘটি বাঙ্গাল এসবের প্রতি কোনদিনই সৌম্যর কোন বাছ বিচার নেই, যেটা ওর বাবার আছে। আর আজই বাবাকে ঘর থেকে ভাগাবার জন্য সৌম্য ফস করে বলে ফেলেছে যে ও ‘ঘটির মেয়েকে ছাড়া বিয়ে করবে না’। এবার ও কী করবে ? যাকে মনে মনে মন দিয়ে বসে আছে সেই তো শালা বাঙ্গালের মেয়ে। তবে ? লাও ঠ্যালা, এবার বোঝ। খুব বেশি চালাকি করতে গিয়ে এবার সৌম্য নিজেই নিজের জালে ফেঁসে বেহাল।    

সৌম্য ব্যাপারটাকে এড়িয়ে গিয়ে চালাকি করে লিখল, “তাহলে আপনি আমাকে আপনার বন্ধু হিসাবে মেনে নিয়েছেন তো মেঘা দেবী ? আমি কি তাহলে আপনার সাথে কোন এক রেস্টুরেন্টে বা পার্কে এক বিকেলে সাক্ষাতের একটা এপো মানে মূল্যবান সুযোগ পেতে পাড়ি মহাশয়া ?” সৌম্য ভাবল বিয়ে টিয়ে তো পরের কথা। আগে মেয়েটার সাথে চুটিয়ে একটু প্রেম করে নেওয়া যাক। তারপর যদি দেখা যায় মেঘা সব দিক দিয়েই একটা দারুণ মেয়ে এবং ওকে না পেলে সৌম্য পাগল হয়ে যাবে তখন না হয় দেখা যাবে। বাঙ্গাল ঘটির ব্যাপারটা নিয়ে এই শুরুতেই মাতামাতি করাটা ঠিক হবে না।     

এরপর যা হবার তাই হল। সৌম্যর সাথে যদিও মেঘা এখনো দেখা করে নি, কিন্তু ওদের ডিজিটাল প্রেম জমে একদম ক্ষীর হয়ে গেল। রোজ সকাল দুপুর আর বেশি রাত পর্যন্ত চলতে থাকে ওদের চ্যাটিং। সৌম্য ধীরে ধীরে মেঘার প্রেমে মজে যায়। বুঝতে পাড়ে ও মেঘাকে ছাড়া আর কাউকে হয়ত জীবন সাথী হিসাবে মেনে নিতে পারবে না। এবার একদিন ওর সাথে দেখা করে আরও কাছাকাছি আসতে হবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। এক রবিবার বেলা চারটের সময় মেঘাদের ভবানিপুরের বাড়ির মোড় থেকে মোটর সাইকেলে ওকে পিক আপ করে সোজা ভিক্টোরিয়া এসে হাজির হল সৌম্য। গাছতলায় খালি বেঞ্চে বসে সৌম্য ভাল করে প্রাণ ভরে দেখতে থাকে মেঘাকে। নীল রঙের ম্যাচিং শাড়ি ব্লাউজ আর নীল মাস্কে ফাটাফাটি লাগছিল ওর ভালো লাগার মানুষটাকে। সৌম্য নিজেও জিনস ও টি সার্ট, চোখে গগলস পরে এসেছে আজ। অবশেষে চোখের দৃষ্টির ঝর্ণার ধারায় ও কথার স্রোতের মাঝে দুজনই দুজনের প্রেমে হাবুডুবু খেতে থাকে।

সৌম্য মেঘার হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে নিজেও হাত পরিষ্কার করে নিয়েছিল। এবার ওর হাতে হাত রেখে জানাল, “আমাকে বিয়ে করবে মেঘা ? আমি তোমাকে নিয়েই স্বপ্নের সাগরে ভেসে যেতে চাই।”

লজ্জানত দৃষ্টিতে মেঘা বলে ওঠে, “কিন্তু আমরা যে বাঙ্গাল সৌম্য। তোমার বাবা মেনে নেবেন কি ?”

সৌম্য মেঘার কাঁধে হাত রেখে বলে, “সেটা তুমি চিন্তা করো না। আমার মেঘা রাণীকে যদি আমি রাজি করাতে পারি তাহলে বাবাকে পারবো না কেন। আর ঐ শয়তান তপুটা আছে কি করতে ? ও ব্যাটা খুব স্মার্ট ছেলে জানো না তুমি । ওকে দিয়ে বাবাকে রাজি করাব। আর মার তো এই ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই। এই তো মা কিছুদিন আগেই মাসীর মাধ্যমে একটা বাঙ্গাল মেয়ের সাথে সম্বন্ধ এনেছিল। আমি অবশ্য না করে দিয়েছিলাম। কারণ তার আগে থেকেই তো আমার মেঘা রাণী বসেছিল আমার মনের ভিতর।

মেঘা সৌম্যর হাত নিজের হাতের মধ্যে এনে একটা চুমু দিয়ে বলল, “থেসা রমাতো গো ছিআ মিআ।”  

সৌম্য হেসে ফেলে আর বলে,’তার মানে তুমি বললে ‘আমি আছি গো তোমার সাথে।‘ ওয়াও।“ গাছের আড়ালের বেঞ্চে বসা আনন্দে সৌম্য জড়িয়ে ধরে চুমুতে ভরিয়ে দেয় ওর মেঘা রানীকে।     

                  ———শেষ——–

* ছবি সৌজন্যে – গুগুল।